আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঘড়ির কাঁটা তখন সবে সকাল ন’টা ছুঁয়েছে। সপ্তাহের অন্যতম ব্যস্ত কাজের দিন। আমেরিকার উত্তর ভার্জিনিয়ার ডামফ্রিজের এক বিশাল ওয়ালমার্ট বিপণিতে রীতিমতো ভিড় জমতে শুরু করেছে। কেউ এসেছেন দৈনন্দিন মুদিখানার সামগ্রী কিনতে, কেউ বা প্রাতঃরাশের জন্য পাউরুটি-দুধ। এমন আপাত শান্ত, স্বাভাবিক পরিবেশেই যে এমন ‘অশালীন’ তাণ্ডব অপেক্ষা করে ছিল, তা কে-ই বা জানত!

রোজকার স্বাভাবিক কেনাবেচায় আচমকাই ছন্দপতন। শান্ত বিপণি মুহূর্তে বদলে গেল আতঙ্কপুরীতে। জিনিসপত্র রাখার ট্রলি উল্টে-পাল্টে একাকার। সমস্ত কেনাকাটা, যাবতীয় ব্যস্ততা শিকেয় তুলে তখন প্রাণভয়ে দৌড়াচ্ছেন ক্রেতারা। শিশুদের কান্নার আওয়াজ, বড়দের আর্তনাদ- সব মিলিয়ে হুলস্থূল কাণ্ড। কারণ? এক সম্পূর্ণ নগ্ন যুবক ক্রেতাদের পিছনে ধাওয়া করেছেন!

 

প্রিন্স উইলিয়াম কাউন্টি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (পিডব্লিউসিপিডি) জানিয়েছে, সকাল ৮টা বেজে ৫৭ মিনিট নাগাদ ডামফ্রিজের রিচমন্ড হাইওয়ের উপর অবস্থিত ওই ওয়ালমার্ট স্টোর থেকে তাঁদের কাছে জরুরি ফোন আসে। জানানো হয়, এক ব্যক্তি স্টোরের ভিতরে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে অশালীন আচরণ করছেন। খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশের একটি দল।

 

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পুলিশকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যে দৃশ্য দেখেন, তাতে তাঁরাও কার্যত হতভম্ব। ২০ বছর বয়সি ল্যান্স আরভিং লেসেন জুনিয়র নামে ওই যুবক তখন সম্পূর্ণ দিগম্বর অবস্থায় স্টোরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, সামনে যাঁকেই পাচ্ছেন, তাঁর দিকেই তেড়ে যাচ্ছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, যুবকের ওই মূর্তি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন উপস্থিত ক্রেতারা। অনেকে জিনিসপত্র ফেলেই দোকানের বাইরে ছুটে পালানোর চেষ্টা করেন। কেউ কেউ আবার ভয়ে এদিক-ওদিক লুকানোর জায়গা খুঁজতে থাকেন। স্টোরের কর্মীরাও প্রথমে বুঝে উঠতে পারছিলেন না, ঠিক কী করা উচিত। কেউ কেউ যুবককে শান্ত করার চেষ্টা করলেও, তিনি কোনও কথাই কানে তুলছিলেন না।

 

পুলিশ জানিয়েছে, লেসেন জুনিয়র ডামফ্রিজেরই বাসিন্দা। পুলিশ যখন পৌঁছায়, তখনও তিনি ওই নগ্ন অবস্থাতেই ছিলেন। পুলিশকর্মীরা কোনওক্রমে তাঁকে শান্ত করে আটক করেন। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের দৃঢ় বিশ্বাস, ওই যুবক সেই সময় মত্ত অবস্থায় ছিলেন। সম্ভবত কোনও কোকেন জাতীয় কোনও মাদক বা অতিরিক্ত মদের প্রভাবেই তিনি এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তবে স্বস্তির বিষয় হল, এই ঘটনায় কোনও ক্রেতা বা কর্মী শারীরিকভাবে আহত হননি। শারীরিক ভাবে আহত না হলেও এমন ঘটনায় যে অনেকেই মানসিক ভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন, তা বলাই বাহুল্য।

আরও পড়ুন: মোবাইলে মারণছোঁবল! ১৩ বছরের আগে শিশুদের ফোন দিলেই হতে পারে এই কঠিন রোগ, চরম সতর্কবার্তা বিজ্ঞানীদের

এমন ‘বেআব্রু’ আচরণের জন্য বড়সড় আইনি প্যাঁচে পড়েছেন লেসেন। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘অশালীন অঙ্গভঙ্গি’ বা ‘অঙ্গ প্রদর্শন’, ‘জনসমক্ষে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং ‘প্রকাশ্যে মাদকাসক্ত হয়ে ঘোরাফেরা’ করার অভিযোগ।

পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “জনসাধারণের মধ্যে প্রকাশ্যে এমন আচরণ কোনওভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। আমরা খবর পাওয়া মাত্রই দ্রুত পদক্ষেপ করেছি।” লেসেনকে আপাতত জেলহাজতে রাখা হয়েছে। তাঁর জামিনের বিষয়ে কোনও তথ্য এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। কবে তাঁকে আদালতে তোলা হবে, সেই দিনক্ষণও এখনও স্থির হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

তবে গোটা ঘটনায় ডামফ্রিজের ওই শান্ত তল্লাটে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। নিছক বাজার করতে এসে এমন ‘নগ্ন’ আতঙ্কের মুখে পড়তে হবে, তা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি ওয়ালমার্টের ওই ক্রেতারা।