আজকাল ওয়েবডেস্ক: মেরি ক্যুরিকে ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে স্মরণ করা হয়। কিন্তু তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে একটি বিপদও। তিনি দু’টি তেজস্ক্রিয় উপাদান, পোলোনিয়াম এবং রেডিয়াম আবিষ্কার করেছিলেন, যা তাঁকে বিশ্বডোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছিল। কিন্তু তাঁর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করেছিল মারাত্মক।
তেজস্ক্রিয় উপাদানের উপর ক্যুরির অগ্রণী গবেষণা দীর্ঘস্থায়ী বিপদের দিকে ঠেল দিয়েছিল তাঁকে। ক্যুরির দেহাবশেষ এবং জিনিসপত্র যা আজও ব্যাপক তেজস্ক্রিয়। ১৯৩৭ সালে ক্যুরি অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় মারা যান। যা তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সংস্পর্শে আসার ফলে সৃষ্ট একটি বিরল রোগ। এই রোগ সম্পর্কে তিনি এবং তাঁর স্বামী পিয়ের তখন খুব একটা ধারণা করেননি যে এটি ক্ষতিকারক। তাঁরা কোনও প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম ছাড়াই এই উপাদানগুলি নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন। এমনকি তাঁদের পকেটে পোলোনিয়াম এবং রেডিয়ামের বোতলও বহন করেছিলেন।
সেই সময়, তেজস্ক্রিয়তাকে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে বিশ্বাস করা হত। অনিদ্রা নিরাময়ের জন্য স্নানের লবণে রেডিয়াম যোগ করা হত এবং কোনও রকম সতর্কতা ছাড়াই ‘এনার্জি ড্রিংকস’-এ মিশিয়ে বিক্রি করা হত।
আরও পড়ুন: এই তালিকায় চীনের ধারেকাছে ঘেঁষতে পারেনি আমেরিকা, টলমলে ভারতের অবস্থাও।! কী জানেন?
ক্যুরির অনেক জিনিসপত্র, যার মধ্যে তার বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রও রয়েছে, সেগুলি প্যারিসের বিবলিওথেক ন্যাশনাল ডি ফ্রান্সে রাখা আছে। দর্শনার্থীরা পিয়েরে এবং মেরির সংগ্রহ দেখতে পারেন, তবে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরেই। এই জিনিসপত্রগুলি নাড়াচাড়া করে দেখার জন্য প্রতিরক্ষামূলক পোশাক প্রয়োজন। কারণ, বস্তুগুলি ব্যাপক তেজস্ক্রিয় এবং সেগুলিকে সীসাযুক্ত বাক্সে সংরক্ষণ করা হয়। এগুলি আগামী প্রায় দেড় হাজার বছর বিপজ্জনক থাকবে।
মেরি এবং পিয়েরকে প্রথমে প্যারিসের সিও কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল। তবে, ১৯৯৫ সালে, তাদের দেহাবশেষ প্যান্থিয়নে স্থানান্তরিত করা হয়, যা বিখ্যাত ফরাসি ব্যক্তিত্বদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ সমাধিস্থল। তারপরও, তাঁদের মৃতদেহ সীসার কফিনে রাখা হয়েছিল যাতে তারা যে বিপজ্জনক রেডিয়াম-২২৬ এর সংস্পর্শে এসেছিলেন সেই তেজস্ক্রিয়তাকে ধারণ করা যেতে পারে।
রেডিয়াম-২২৬ হল রেডিয়ামের সবচেয়ে স্থিতিশীল আইসোটোপ। যার অর্থ এটি বিপজ্জনক হিসেবে রয়ে গিয়েছে এবং শত শত বছর ধরে তা-ই থাকবে। এর ফলে দুই বিজ্ঞানীর সমাধিগুলি এখনও তেজস্ক্রিয়।
