আজকাল ওয়েবডেস্ক:  অ্যামেচার জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গবেষকদের যৌথ প্রচেষ্টায় বিজ্ঞানীরা অনুমান করতে পেরেছেন কীভাবে একটি ছোট অ্যাস্টেরয়েড মহাশূন্য থেকে পৃথিবীতে এসে বায়ুমণ্ডলে ভেঙে আগুনের গোলার মতো ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে তারা জানতে পেরেছেন মহাজাগতিক শিলাগুলো আসলে কীভাবে ভেঙে যায় ও পৃথিবীতে পতিত হয়।


২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি, স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে, উত্তর-পশ্চিম ফ্রান্সের আকাশ আলোকিত করে ভেঙে পড়ে অ্যাস্টেরয়েড 2023 CX1। মাত্র সাত ঘণ্টা আগে, হাঙ্গেরির এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী এটিকে শনাক্ত করেছিলেন। ছোট্ট এই মহাজাগতিক শিলা ছিল এক মিটারেরও কম চওড়া এবং ওজন প্রায় ৬৫০ কেজি। তখন সেটি পৃথিবী থেকে প্রায় ২ লক্ষ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।


এই আবিষ্কারের পর নাসা ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার বিজ্ঞানীরা মুহূর্তের মধ্যেই এর অবতরণের সঠিক সময় ও অবস্থান নির্ণয় করে ফেলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন মানমন্দির ও গবেষণা সংস্থা দ্রুত যুক্ত হয়ে পর্যবেক্ষণে অংশ নেয়।

আরও পড়ুন: এবার সবাই ছুটবে ব্রাজিলে, হাতে এল কোন খনি


ফ্রান্সের FRIPON/Vigie-Ciel নেটওয়ার্ক – যা প্রায় এক দশক আগে উল্কাপিণ্ড সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছিল এই গবেষণায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি অসংখ্য অ্যামেচার জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছবি ও ভিডিও সরবরাহ করেন।


ফরাসি ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির উল্কাপিণ্ড বিশেষজ্ঞ ব্রিজিট জান্ডা বলেন, “আমরা জনসাধারণের কাছ থেকে ডজনেরও বেশি ছবি ও ভিডিও পেয়েছি। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে করে আমরা ঘটনাটি অতুলনীয় নির্ভুলতায় পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছি।”


ঘটনার দুই দিন পর ফ্রান্সের সাঁ-পিয়ের-লে-ভিজের এলাকায় স্থানীয়দের সহায়তায় প্রথম উল্কাপিণ্ডটি পাওয়া যায়, যার ওজন ছিল মাত্র ৯৩ গ্রাম। পরবর্তী সময়ে মোট এক ডজনের মতো উল্কাপিণ্ড সংগ্রহ করা হয় এবং এগুলো বর্তমানে জাদুঘরের সংগ্রহে সংরক্ষিত।


এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার আগে মাত্র ১১টি অ্যাস্টেরয়েড শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৪টি থেকে উল্কাপিণ্ড সংগ্রহ করা গেছে। 2023 CX1 সেই তালিকায় অন্যতম। গবেষণায় ধারণা করা হচ্ছে, এই অ্যাস্টেরয়েড সম্ভবত মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝামাঝি অবস্থিত থেকে ভেঙে এসেছে।


বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় এটি প্রায় ২৮ কিমি উচ্চতায় দু’ধাপে ভয়ংকরভাবে ভেঙে যায়। এতে এর ৯৮% ভর নষ্ট হয়ে বিপুল শক্তি মুক্তি পায়। 
সৌভাগ্যবশত, 2023 CX1-এর টুকরোগুলো কোনও ক্ষতি করেনি। তবে কম্পিউটার সিমুলেশনে দেখা গেছে, এই ধরনের হঠাৎ ও শক্তিশালী ভাঙন অনেক সময় ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে ২০১৩ সালে রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্ক শহরে পতিত প্রায় ২০ মিটার প্রশস্ত অ্যাস্টেরয়েডের ঘটনা টানা হয়। সেখানে ধারাবাহিক পাঁচ ধাপে ভাঙনের ফলে উৎপন্ন শকওয়েভে হাজারো জানালা ভেঙে যায় এবং এক হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল। সব মিলিয়ে, 2023 CX1-এর পতন শুধু বৈজ্ঞানিক গবেষণার নতুন তথ্যই দেয়নি, বরং পৃথিবীতে মহাজাগতিক হুমকির প্রকৃতি বোঝাতেও বড় অবদান রেখেছে।