আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতভর চলা নতুন গুলিবিনিময়ে পাকিস্তানি সেনা ও তালিবান যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষে দশকের পর দশক সম্পর্ক থাকা দুই প্রাক্তন মিত্রের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। সংঘর্ষে ইতিমধ্যে বহু প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানা গেছে। উভয় পক্ষই একে অপরের ওপর আগ্রাসন শুরুর অভিযোগ এনেছে।


সীমান্তবর্তী স্পিন বোলডাক অঞ্চলে পাকিস্তানের গুলি চালানোর মাধ্যমে সংঘর্ষ শুরু হয় বলে দাবি করেছে আফগানিস্তানের তালিবান সরকার। তালিবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ জানান, পাকিস্তানি সেনারা “হালকা ও ভারী অস্ত্র” ব্যবহার করে হামলা চালায়, এতে অন্তত ১৫ জন নাগরিক নিহত ও ১০০ জনের বেশি আহত হন। আহতদের মধ্যে ৮০ জনেরও বেশি নারী ও শিশু রয়েছে বলে স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।


প্রতিশোধমূলক হামলায় তালিবান যোদ্ধারা পাকিস্তানের বহু সেনা সদস্যকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি ট্যাঙ্ক ও অস্ত্র জব্দ করেছে বলে দাবি করেছে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, তালিবান যোদ্ধারা পাকিস্তানের একটি T-55 ট্যাঙ্কে চড়ে ঘুরছে, যা ইসলামাবাদ সার্বিয়া থেকে কিনেছিল।

আরও পডুন: চাকরি হারানোর পর কত টাকা আপনি ইপিএফও থেকে তুলতে পারবেন, দেখে নিন একঝলকে


অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আফগানিস্তান সীমান্তের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের দুটি বড় পোস্টে তালিবান হামলা চালায়, তবে পাকিস্তানি সেনারা সেই হামলা প্রতিহত করেছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, কমপক্ষে ৩০ জন তালিবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে, এবং স্পিন বোলডাকের কাছে আরও ২০ জন নিহত হয়েছে।


চামান জেলায় তালিবান হামলায় চারজন বেসামরিক নাগরিক আহত হন, এবং ওরাকজাই সীমান্ত জেলায় ছয়জন পাকিস্তানি প্যারামিলিটারি সদস্য নিহত হয়েছে। সংঘর্ষের কারণে সীমান্তবর্তী এলাকায় হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে।


সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল গত সপ্তাহে, যখন পাকিস্তান কাবুলে তথাকথিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (TTP)-এর শিবিরে বিমান হামলা চালায়। ইসলামাবাদ দাবি করেছিল, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে TTP পাকিস্তানি সেনাদের ওপর শতাধিক হামলা চালিয়েছে। এর জবাবেই পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালায়।


এরপর তালিবান পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমণ চালায়, যাতে ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও ২০টি নিরাপত্তা পোস্ট ধ্বংস হয়। এই হামলাগুলি ছিল ২০২১ সালের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র সংঘর্ষ।


উল্লেখযোগ্যভাবে, সম্প্রতি পাকিস্তান ও সৌদি আরব একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, এক দেশের ওপর হামলা মানেই অন্য দেশের ওপর হামলা বলে বিবেচিত হবে।


সংঘর্ষের মধ্যে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমানে ভারতে সফরে রয়েছেন যা কাবুল ও নয়াদিল্লির সম্পর্ক জোরদারের ইঙ্গিত দিচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির মধ্যেই এই সফর দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক ভারসাম্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।


সৌদি আরব ও কাতারের আহ্বানে রবিবার স্বল্প বিরতি এলেও মঙ্গলবার রাত থেকে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। গত ১০ দিন ধরে অধিকাংশ সীমান্ত পারাপার বন্ধ রয়েছে। মোটের ওপর, পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে এই নতুন সংঘর্ষ শুধু দুই দেশের মধ্যেকার পুরনো অবিশ্বাসকেই নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক ভারসাম্যের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।