আজকাল ওয়েবডেস্ক: জার্মান একনায়ক অ্যাডলফ হিটলার সম্পর্কে নতুন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যা ইতিহাসবিদ ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে আলোচনার ঝড় তুলেছে। ব্রিটিশ টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল ৪-এর আসন্ন ডকুমেন্টারি “Hitler’s DNA: Blueprint of a Dictator”-এ প্রকাশ পেতে যাচ্ছে যে হিটলারের শরীরে এক বিরল জেনেটিক বিকৃতি ছিল, যা তার যৌনাঙ্গের বিকাশে প্রভাব ফেলেছিল। এই কারণে তিনি যৌন সম্পর্কে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং স্বাভাবিক পরিণত বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছাতে পারেননি।
বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, হিটলারের জিন বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে তিনি “Kallmann Syndrome” নামে এক জেনেটিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত অসম্পূর্ণ বয়ঃসন্ধি পার করেন, এবং তাদের যৌনাঙ্গ স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হয় না। বিশ্লেষণের ফলাফলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে হিটলারের মাইক্রো-পেনিস (অতি ক্ষুদ্র যৌনাঙ্গ) ছিল। এটি তার মানসিক ও ব্যক্তিগত জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, এবং অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন যে এই জৈবিক অপূর্ণতা থেকেই তার জীবনের হতাশা, রাগ ও চরম উচ্চাকাঙ্ক্ষা জন্ম নিয়েছিল।
ডকুমেন্টারিতে আরও বলা হয়েছে, এই জেনেটিক তথ্য হিটলারের রক্তের দাগযুক্ত একটি সোফার কাপড় থেকে সংগৃহীত ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে পাওয়া গেছে। এই কাপড় ১৯৪৫ সালে তার আত্মহত্যার পর রক্তের দাগ ছিল। বিশ্লেষণটি পরিচালনা করেছেন বিখ্যাত জেনেটিসিস্ট প্রফেসর টুরি কিং, যিনি বলেন, “যদি হিটলার নিজের জিনগত ফলাফল নিজেই দেখতে পারতেন, তাহলে হয়তো তিনিই নিজেকে গ্যাস চেম্বারে পাঠাতেন।”
এই গবেষণা আরও একটি দীর্ঘদিনের বিতর্কের অবসান ঘটায় যে হিটলারের মধ্যে ইহুদি বংশোদ্ভূত জিন ছিল কি না। গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন, তার ডিএনএ-তে তেমন কোনও ইহুদি বংশোদ্ভূত জিন পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, সেই তত্ত্ব সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ডকুমেন্টারিতে অন্য এক গবেষক উল্লেখ করেছেন যে হিটলারের যৌন অক্ষমতা এবং শারীরিক অপূর্ণতা তার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তিনি যৌনজীবনে ব্যর্থ হলেও ক্ষমতার মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণের এক অদম্য ইচ্ছা তৈরি করেছিলেন। বিশেষত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সহযোদ্ধারা তার শারীরিক ত্রুটিকে উপহাস করতেন—যা তার মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। ২০১৫ সালে প্রকাশিত ১৯২৩ সালের একটি মেডিকেল রিপোর্টেও উল্লেখ ছিল যে, হিটলারের একটি অণ্ডকোষ অবতীর্ণ হয়নি ।
ইতিহাসবিদ অ্যালেক্স জে কে যিনি জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বলেন, “অন্যান্য নাৎসি নেতাদের স্ত্রী, সন্তান ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। কিন্তু হিটলারই একমাত্র যিনি সম্পূর্ণভাবে এই ধরনের সম্পর্ক থেকে দূরে ছিলেন।” তার মতে, এই কারণেই “শুধু হিটলারের অধীনে নাৎসি আন্দোলন ক্ষমতায় উঠতে পেরেছিল।”
এছাড়া, হিটলারের ডিএনএ বিশ্লেষণ থেকে আরও জানা যায় যে তিনি একাধিক মানসিক ও নিউরোডাইভার্স সমস্যায় ভুগতে পারেন। ডকুমেন্টারিতে বলা হয়েছে, তার জিনগত গঠনে অটিজম, স্কিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিসঅর্ডার-এর প্রবণতা উচ্চ মাত্রায় ছিল। তবে গবেষকরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি, এই রোগগুলির মধ্যে কোনটি তিনি বাস্তবে ভুগতেন।
তবে, বিজ্ঞানীরা স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছেন যে এই তথ্যগুলিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। ব্রিটিশ ইহুদি মনোবিজ্ঞানী সাইমন ব্যারন-কোহেন বলেন, “হিটলারের নিষ্ঠুরতা বা হিংস্রতাকে মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে তুলনা করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ এই রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ কখনই হিংস্র নয়, বরং অনেকেই অত্যন্ত সহানুভূতিশীল।”
