আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাত্র ১৭ ঘণ্টা আগে তরুণী জানতে পারলেন তিনি অন্তঃসত্ত্বা। আর তার পরপরই জন্ম দিলেন সন্তানের! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনই ঘটনা ঘটেছে ২০ বছর বয়সি চার্লট সামারসের সঙ্গে। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের বাসিন্দা এই তরুণী সম্প্রতি টিকটক অ্যাপে শেয়ার করেছেন তাঁর জীবনের এই অবিশ্বাস্য গল্প। জানা গিয়েছে, চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয়ে থাকে ‘ক্রিপটিক প্রেগন্যান্সি’। এটি এমন এক বিরল অবস্থা, যেখানে গর্ভধারণের বেশিরভাগ সময়জুড়ে ব্যক্তি বুঝতেই পারেন না যে তিনি সন্তানসম্ভবা।

চার্লট জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাঁর ওজন কিছুটা বাড়লেও তা ‘স্ট্রেস’ বা ‘হ্যাপি রিলেশনশিপের ওজন’ ভেবেই গুরুত্ব দেননি। তিনি বলেন, ‘আমি সম্প্রতি একটু বড় সাইজের জামাকাপড় কিনছিলাম। শরীরে একটু পেটের চর্বি বেড়েছিল, কিন্তু সেটা গর্ভাবস্থার জন্য এমনটা ভাবিনি। দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে সম্পর্কে আছি। তাই ধরেই নিয়েছিলাম এটা সাধারণ ভাবে ওজন বেড়ে যাওয়া’। এরপর, চলতি বছরের গত ৬ জুন গ্লুটেন সংবেদনশীলতা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান তিনি। সেই সময় চিকিৎসক একটি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করান এবং জানিয়ে দেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা।

তবে চিকিৎসক মনে করেছিলেন গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছেন চার্লট। পরে তাঁর সঙ্গীর পরিবারের উদ্যোগে সেইদিনই একটি আল্ট্রাসাউন্ড করানো হয়।ব আর সেখানেই ধরা পড়ে তিনি গর্ভাবস্থার ৩৮ সপ্তাহ ৪ দিন অতিক্রম করে ফেলেছেন! এই খবরে হতবাক হয়ে যান সবাই। চার্লট বলেন, ‘আমি পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ব্যাগ গুছিয়ে আমার সঙ্গীকে ফোন করলাম, বললাম, এই মুহূর্তেই হাসপাতাল যেতে হবে’। আল্ট্রাসাউন্ডে দেখা যায়, তাঁর প্লাসেন্টার অবস্থান সামনের দিকে, যার ফলে সাধারণ গর্ভাবস্থার উপসর্গগুলো তিনি টের পাননি।

চিকিৎসকরা জানান, প্লাসেন্টা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তাঁকে তৎক্ষণাৎ ভর্তি করা হয় মেটারনিটি ওয়ার্ডে এবং গর্ভধারণ নিশ্চিত হওয়ার ১৭ ঘণ্টা ২১ মিনিটের মধ্যেই তিনি একটি সুস্থ পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। চার্লট জানান, ‘আমি হাঁটু গেড়ে বসে বমি করছিলাম। ভাবছিলাম, এই মুহূর্তে এমনটা কীভাবে সম্ভব? কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, সব যেন একটা স্বপ্নের মতো লাগছিল’। পুরো গর্ভকালীন সময় ধরেই চার্লট নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি খেয়ে গেছেন। এমনকি, নিয়মিত ঋতুচক্র হওয়ার মতো লক্ষণও দেখেছেন, যা তাঁকে পুরোপুরি বিভ্রান্ত করে দিয়েছিল। এই খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার পর অনেকেই তাঁর অভিজ্ঞতাকে ভুয়ো বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।

এরপর চার্লট হাসপাতালের নথিপত্র শেয়ার করেন, যেখানে ‘কনসিলড প্রেগন্যান্সি’ বা ‘গোপন গর্ভাবস্থা’-র কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। এই নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহের পরও চার্লট ও তাঁর সঙ্গী এখন সন্তানের সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করে অত্যন্ত খুশি। তিনি জানান, ‘আমরা সবাই সুস্থ, ভাল আছি এবং আমাদের নতুন জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ’। কিন্তু এই ক্রিপটিক প্রেগন্যান্সি আসলে কী? বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ক্রিপটিক প্রেগন্যান্সি’ এমন একটি অবস্থা যেখানে গর্ভবতী নারী নিজেই গর্ভধারণের বিষয়টি বুঝতে পারেন না কারণ তাঁর শরীরে প্রথাগত লক্ষণ দেখা যায় না। পরিসংখ্যান বলছে, এটি প্রতি ২৫০০জন মহিলার মধ্যে ১ জন মহিলার মধ্যে দেখা যেতে পারে।