আজকাল ওয়েবডেস্ক:  রোম্যান্টিক ছুটি কাটাতে পুয়ের্তো রিকো যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন জনপ্রিয় স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েন্সার মেরি কালদাস ও তাঁর সঙ্গী আলেজান্দ্রো সিড। ফ্লাইট, হোটেল, ঘোরার প্ল্যান— সব কিছুই তৈরি ছিল। কিন্তু একটি ছোট ভুল তাঁদের স্বপ্নের সফরকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করল।

ভুল কোথায় হলো?

মেরি, যিনি হাজার হাজার ফলোয়ারের সঙ্গে ভ্রমণ ও লাইফস্টাইল শেয়ার করেন, যাত্রার আগে ভিসা সংক্রান্ত নিয়ম জানতে চেয়েছিলেন চ্যাটজিপিটির কাছে। উত্তর আসে— “না, ভিসা লাগবে না।” এখানেই ঘটে বিভ্রান্তি। স্প্যানিশ পাসপোর্টধারীরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের আওতায় পড়লেও তাঁদের ভিসা না লাগার অর্থ এই নয় যে কোনো কাগজপত্র লাগবে না। বাস্তবে, যুক্তরাষ্ট্র বা তার আওতাধীন অঞ্চলে প্রবেশের আগে একটি ESTA (Electronic System for Travel Authorization) অনলাইনে পূরণ করা বাধ্যতামূলক। এই ধাপটি এড়িয়ে যাওয়াতেই তাঁদের সফর শুরুই হলো না।

বিমানবন্দরে থেমে গেল যাত্রা

সব কিছু গুছিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছতেই এয়ারলাইন্স জানায়, ESTA ছাড়া তাঁদের বোর্ডিং সম্ভব নয়। তখনই বাস্তবতা সামনে আসে— সরকারি অনুমতি ছাড়া মার্কিন অঞ্চলে প্রবেশ করা যাবে না। হতাশ মেরি পরদিন টিকটক ও ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে তাঁকে বিমর্ষ অবস্থায় টার্মিনালে হাঁটতে দেখা যায়, পাশে আলেজান্দ্রো তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। ভিডিওতে মেরি বলেন— “আমি সব সময় অনেক খোঁজখবর করি, কিন্তু এবার চ্যাটজিপিটি-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আর সে বলল ভিসা লাগবে না।” মজার ছলে তিনি আরও যোগ করেন, “ওকে আমি মাঝে মাঝে গাল দিই— বলি তুমি একটা বেকার, কিছুই পারো না। এবার হয়তো ও প্রতিশোধ নিল।”

আরও পড়ুন: নতুন আতঙ্ক ‘এআই সাইকোসিস’! কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডেকে আনছে ভয়ঙ্কর রোগ! কীভাবে চিনবেন?

ভাইরাল ভিডিও, তুমুল বিতর্ক

ভিডিওটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। বহু মানুষ সমালোচনা করে বলেন— “যদি সমুদ্র পেরিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করতে যাও, তবে শুধু চ্যাটবটের উত্তরের ওপর ভরসা করাই বিপদ ডেকে আনে।” আবার অনেকে সহানুভূতি দেখিয়ে বলেন, উত্তরটি পুরোপুরি ভুল ছিল না, বরং অসম্পূর্ণ ছিল। প্রশ্নের ধরনেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

কেন ESTA জরুরি?

পুয়ের্তো রিকো যুক্তরাষ্ট্রের অসংযুক্ত অঞ্চল (unincorporated territory) হওয়ায় মূল ভূখণ্ডের মতো একই অভিবাসন আইন প্রযোজ্য। ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের আওতাভুক্ত দেশের নাগরিকদের প্রচলিত ভিসা লাগেনা।  তবে ESTA ফর্ম পূরণ বাধ্যতামূলক। ESTA ছাড়া বিমানে ওঠা যাবে না, কারণ তা হলে প্রবেশ হবে অবৈধ। এয়ারলাইন্সও নিয়ম ভেঙে যাত্রী তুলতে পারে না। এই ধাপ বাদ দেওয়ায় মেরি ও আলেজান্দ্রোর সফর শুরুই হতে পারল না।

এই ঘটনার জেরে শুধু অর্থ নয়, অমূল্য অভিজ্ঞতাও হারালেন তাঁরা। তাঁদের গল্প এখন এক সতর্কবার্তা— সরকারি নিয়মকানুন যাচাই না করে শুধু AI-এর ওপর নির্ভর করলে বড় ক্ষতি হতে পারে। ভিসা নীতি, কাস্টমস ও ভ্রমণ সম্পর্কিত নিয়ম প্রায়ই পরিবর্তিত হয়। তাই ভ্রমণ পরিকল্পনার সময় চ্যাটবট বা সার্চ ইঞ্জিন থেকে প্রাথমিক তথ্য নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই সরকারি ওয়েবসাইট বা অফিসিয়াল সূত্র থেকে তথ্য যাচাই করা উচিত।  মেরি ও আলেজান্দ্রোর অভিজ্ঞতা তাই স্পষ্ট করে দিল— “ভিসা নেই” মানে সব সময় “কোনো কাগজপত্র নেই” নয়।