আজকাল ওয়েবডেস্ক: একজন চিনা ফুড ডেলিভারি কর্মীর এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য সম্প্রতি সামনে এসছে৷ তাঁর চোখের জল ও কষ্টের কথা এখন হাজারো মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। কিছুদিন আগে তিনি তাঁর কাজের ফাঁকে এক আবেগঘন ভিডিও রেকর্ড করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন। ভিডিওটিতে তিনি নিজের দৈনন্দিন জীবনের মানসিক ও শারীরিক দুর্দশার কথা খোলাখুলি জানান। সেখানে তাঁকে উজ্জ্বল হলুদ ইউনিফর্ম পরে থাকা অবস্থায় দেখা যায়। এই ঘটনা নেটপাড়ায় প্রকাশ হতেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে৷ 

দেখা যাচ্ছে ভিডিওতে তিনি বলছেন, তিনি প্রতিদিন দিনে প্রায় ১০ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করেন। এতে কোনও বিশ্রাম নেই। এরপরও তাঁর কাছে ঠিকমতো জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। 

ভিডিওতে তিনি জানিয়েছেন, তিনি যখন তাঁর ছাত্রজীবনে ছিলেন সেইসময় শিক্ষকদের কথা শোনেননি। যারা তাঁকে মন দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার উপদেশ দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, 'আমার শিক্ষকরা আমাকে স্কুল ছাড়তে মানা করেছিলেন, কিন্তু আমি শুনিনি। এখন বুঝি, ওঁরা ঠিকই বলেছিলেন। এখন দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় ফুড ডেলিভারি করি। বিশ্রামের সুযোগ নেই, একটা মুহূর্তের জন্যও ঢিলে দিলে জীবন আমাকে খালি পেটে রাখে। আমি কীভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হই?'

এখানেই তিনি থামেন না। এরপর আরও জানাতে থাকেন, এই কাজের চাপ, অনিশ্চয়তা, এবং পরিবারের জন্য কিছু করতে না পারার যন্ত্রণায় তিনি ভেঙে ক্রমাগত ভেঙে পড়েছেন। 'আমি আমার বাবা-মাকে তাঁদের প্রাপ্য জীবন দিতে পারিনি। নিজের জীবনটাকেও নিজের মতো করে গড়তে পারছি না। এটা আমার হৃদয় ভেঙে দিনের পর দিন ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু আমি এসব কথা কার সঙ্গে বলব?'

ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিল, 'এই মানুষটি কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি। তিনি জানান, কীভাবে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করেও কোনওরকম বিশ্রাম, নিরাপত্তা কিংবা ভবিষ্যতের স্থিতিশীলতা কিছুই পাচ্ছেন না।' ভিডিওটি পোস্ট হতেই হাজার হাজার দর্শক সহানুভূতি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুনঃ হিমাচল প্রদেশ ফের খবরের শিরোনামে, বিপর্যস্ত জনজীবন, বন্যার পরবর্তী ধ্বংসাবশেষ প্রকাশ্যে আসতেই আঁতকে উঠল সবাই

একজন সহানুভূতির সঙ্গে মন্তব্য করেন, 'ভাই কেঁদো না, এখনকার দিনে ডিগ্রিধারীরাও কষ্টে আছে। চিন্তা কোরো না।' আরেকজন প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, 'যাঁদের পরিবার সুযোগ দিতে পারে, সেটা যে কত বড় আশীর্বাদ! সেটা অনেকেই বোঝে না।' তৃতীয় একজন বলেন, 'স্যার, আমার ডিগ্রি আছে, তবুও আমি আপনার মতো একই অবস্থায় আছি।'

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগেও চিনের হাংজু শহরে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ঘটনার কথা মনে পড়ে যায় এই ঘটনা থেকে। সেখানে গত বছর এক ৫৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ ফুড ডেলিভারি কর্মী ১৮ ঘণ্টা ধরে টানা কাজ শেষে তাঁর ইলেকট্রিক বাইকের ওপর ঘুমিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে কিচ্ছুক্ষণ সেখানে পড়ে থাকা অবস্থাতেই মারা যান তিনি৷ যেই ঘটনা গোটা দেশের সবাইকে চমকে দিয়েছিল৷ 

আরও পড়ুনঃ মা হওয়া নিয়েই প্রশ্ন? এক মুহূর্তে দক্ষ পেশাজীবীকে চাকরি থেকে বাতিল করলেন এইচ আর, ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য 

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলো আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, এমন ধরণের কাজ করা হাজার হাজার শ্রমিক, যাঁদের জীবনে নেই নিরাপত্তা, নেই বিশ্রাম, এমনকি নেই ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা।