আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিয়ের কয়েক বছর যেতে না যেতেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন স্ত্রী। এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা জেনে, কোনও বাধা না দিয়ে তাঁকে প্রেমিকের হাতে তুলে দেওয়ার উদাহরণও রয়েছে। ঠিক যেমনটা ঘটেছে ইন্দোনেশিয়ায়।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব সুলাওয়েসি প্রদেশের উত্তর কোনাওয়ে জেলায় ঘটনাটি ঘটেছে। ইন্দোনেশিয়ায় এক যুবক জানতে পারেন, তাঁর স্ত্রী বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। কোনও বাধা না দিয়ে, অশান্তি না করে, প্রেমিকের হাতে স্ত্রীকে তুলে দেন তিনি। এর বদলে গরু, ঐতিহ্যবাহী কিছু সামগ্রী ও নগদ টাকা নেন ওই যুবক।
জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়ার তোলাকি প্রজাতির বাসিন্দা এই যুবক। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা শান্তি ও সম্মান রক্ষার্থে যেকোনও পথ অবলম্বন করে। পাঁচ বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে একটি বোর্ডিং হাউসে স্ত্রীকে অন্য এক যুবকের সঙ্গে দেখে ফেলেন। চুপিচুপি এখানেই যুবকের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে আসতেন স্ত্রী। কয়েক মাস ধরেই চলছিল এই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক।
স্ত্রীর প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পেরেই থানায় পৌঁছে যান যুবক। বিষয়টি পুলিশকেও জানান। থানায় ডেকে পাঠানো হয় যুবকের স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিককে। পুলিশি জেরায় বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কেও কথাও স্বীকার করে নেন তাঁরা। কিন্তু পুলিশি পদক্ষেপ এড়িয়ে, গ্রামে ফিরে বয়স্কদের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করেন যুবক।
সেই আলোচনার পর যুবক সিদ্ধান্ত নেন, তোলাকি সম্প্রদায়ের মোয়ে সারাপু প্রথা পালন করবেন। কী এই প্রথা? এই রীতি অনুযায়ী, শান্তির জন্য ত্যাগ করতে হবে। কয়েক দশকের পুরনো এই রীতি। দাম্পত্য কলহ, সাংসারিক অশান্তি কমাতে তোলাকি সম্প্রদায়ের লোকেরা এই রীতি প্রায়ই মেনে চলেন। তাঁদের ধারণা, কোনও সমস্যা যদি না মেটে, তাহলে পরিবারেই বিপর্যয় ঘনিয়ে আসতে পারে। বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকে শান্তি বজায় রাখতে, ত্যাগের পথ অবলম্বন করেন তাঁরা।
প্রথা অনুযায়ী, যুবক ও তাঁর স্ত্রী পাশাপাশি বসেছিলেন। রীতি অনুযায়ী পরিবারের সদস্যরা, সম্প্রদায়ের লোকেরাও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। তাঁদের সামনে বসেছিলেন স্ত্রীর প্রেমিক। একে একে প্রথা মেনে, একটি গরু, ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র, তামার পাত্র এবং নগদ টাকা প্রেমিকার স্বামীর হাতে তুলে দেন যুবক।
গ্রামের প্রধান সফ্রুদ্দিন জানিয়েছেন, এই প্রথার পরেই দম্পতির বিয়ে ভেঙে যায়। স্ত্রীকে প্রেমিকের হাতে তুলে দেওয়ার পর আলিঙ্গন করেন যুবক। এটিও প্রথার একটি অংশ। প্রতিশোধের পরিবর্তে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াই এর মূল লক্ষ্য। আবার মোয়ে সারাপু প্রথায় তরুণী যদি আবার স্বামী ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেন, সেক্ষেত্রে সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁর ও তাঁর পরিবারের সম্মানহানি হয়, বলেই জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
