আজকাল ওয়েবডেস্ক: কানাডা তাদের নাগরিকত্ব আইনকে আধুনিক করে তোলার পথে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। বহু বছর ধরে পুরনো আইনের জটিলতার কারণে যেসব মানুষ নাগরিকত্বের বাইরে থেকে গিয়েছিলেন, বিশেষত যারা বিদেশে জন্মানো বা দত্তক নেওয়া সন্তানদের নাগরিকত্ব দিতে পারেননি—তাদের জন্য এবার খুলে গেল নতুন সুযোগ। সদ্য রাজকীয় সম্মতি পাওয়া Bill C-3: An Act to amend the Citizenship Act (2025) কার্যকর হলে হাজার হাজার ভারতীয় পরিবার উপকৃত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বুধবার কানাডার সেনেটে বিলটি পাস হয়। কানাডার ইমিগ্রেশন মন্ত্রী লেনা মেটলেজ ডায়াব জানান, বহুদিন ধরে নাগরিকত্ব আইনের যে ত্রুটিগুলি পরিবারগুলোর জন্য জটিলতা তৈরি করছিল, সেগুলোকেই সংশোধন করাই এই বিলের মূল উদ্দেশ্য।
মন্ত্রী ডায়াব বলেন, “এই আইন পূর্ববর্তী আইনগুলির কারণে যারা নাগরিকত্বের আওতার বাইরে রয়ে গিয়েছিলেন, তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য স্পষ্ট ও ন্যায়সঙ্গত নিয়ম তৈরি করবে, যা আধুনিক পরিবারের বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে। এতে কানাডিয়ান নাগরিকত্ব আরও শক্তিশালী ও সুরক্ষিত হবে।”
যদিও আইনটি কার্যকর হয়নি, তবে রাজকীয় সম্মতি পাওয়ার অর্থ হল সরকার দ্রুতই এর বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে।
২০০৯ সালের আইনে তৈরি হয় ‘Lost Canadians’
২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তন করে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশে জন্মানো কানাডিয়ানরা কেবল তখনই তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে নাগরিকত্ব দিতে পারবে, যদি শিশুর জন্ম কানাডার ভেতরে হয়। এই বিধানকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অন্টারিও সুপিরিয়র কোর্ট অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়।
এই আইন বহু মানুষকে ‘lost Canadians’ শ্রেণিতে ফেলেছিল—যারা ভেবেছিলেন তারা নাগরিকত্বের যোগ্য, কিন্তু পুরনো আইনের কারণে বাদ পড়ে গিয়েছিলেন। বিশেষ করে বহু ভারতীয় পরিবার এতে সমস্যায় পড়েন, কারণ তাঁদের সন্তানদের জন্ম প্রবাসে হলেও পরিবারিক বা পেশাগত কারণে তারা বিদেশে থাকতেন।
কাদের নাগরিকত্ব দেবে নতুন Bill C-3?
Bill C-3–এর মূল পরিবর্তন হল—প্রথম প্রজন্মের সীমাবদ্ধতা সরিয়ে দিয়ে বিদেশে জন্মানো শিশুদেরও নাগরিকত্বের অধিকার দেওয়া, যদি তাদের পিতামাতার কানাডার সঙ্গে “substantial connection” থাকে।
এই সংযোগ প্রমাণের মানদণ্ড হল—পিতামাতাকে দেখাতে হবে যে তারা সন্তানের জন্ম বা দত্তক নেওয়ার আগে মোট ১,০৯৫ দিন কানাডায় বসবাস করেছেন। কানাডিয়ান নাগরিকত্বের জন্য যে সময়সীমা প্রয়োজন, এটিও সেই একই মানদণ্ড।
আইনে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ না থাকলেও আইনপ্রণেতারা জানিয়েছেন—এই ১,০৯৫ দিন ক্রমাগত হতে হবে না, বরং যোগ করে মোট তিন বছর হলেই চলবে। ফলে যারা বিভিন্ন কারণে কানাডা ও বিদেশে আসা–যাওয়া করেন, তারাও এই সুবিধা পাবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তন হাজার হাজার ভারতীয় পরিবারকে নাগরিকত্বের অধিকার ফিরিয়ে দেবে, যাদের সন্তানদের জন্ম কানাডার বাইরে হয়েছে।
কবে কার্যকর হবে আইনটি?
আইন কার্যকর হওয়ার জন্য এখন প্রয়োজন ক্যাবিনেটের আদেশ। আদালত ইতিমধ্যেই সরকারকে জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত সময় দিয়েছে, যাতে ইমিগ্রেশন, রিফিউজিস অ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডা (IRCC) ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করতে পারে।
এই সংশোধন কানাডার নাগরিকত্বকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলবে এবং নিশ্চিত করবে—কানাডার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক থাকা পরিবারগুলি আর পুরনো আইনের কারণে নিজেদের সন্তানদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত না হয়।
