আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভালবাসার শুরু কখন, কীভাবে—তা বলা কঠিন। কারও জীবনে সেটা ঘটে কোনও আকস্মিক ঘটনায়, আবার কারও ক্ষেত্রে আসে ধীরে ধীরে। ফরাসি-কানাডিয়ান এক মহিলার ক্ষেত্রে সেই মুহূর্ত এসেছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত ভাবে—একটি মোটরবাইক হেলমেটের দোকানে!

 

২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে বসবাসকারী ওই মহিলা বিবাহবিচ্ছেদের পর আর প্রেমে জড়াতে চাননি। কেবল নিজের কুকুর নিয়ে একাকী জীবনযাপনেই তিনি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। সপ্তাহে ছয় দিন ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও রবিবারগুলো ছিল ভীষণ নিঃসঙ্গ। তখনই তিনি এক অনলাইন ডেটিং সাইটে নিজের প্রোফাইল খোলেন। প্রোফাইলে লিখেছিলেন, “I dare you to excite my synapses”— অর্থাৎ, এবার তিনি এমন কাউকেই খুঁজছিলেন যিনি মেধা দিয়ে তাঁকে মুগ্ধ করতে পারেন।

 

প্রোফাইলে সাড়া দেন ক্রিস নামের এক ব্যক্তি। যদিও ক্রিস স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, তিনি গম্ভীর সম্পর্কই খুঁজছেন—কোনও ক্ষণস্থায়ী সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ নেই। প্রথমে দ্বিধায় থাকলেও, মহিলাটি ক্রিসের সঙ্গে ইমেলে নিয়মিত যোগাযোগ শুরু করেন। কয়েক সপ্তাহ পর তাঁরা প্রথম দেখা করেন এক ফান্ডরেইজিং অনুষ্ঠানে। ক্রিসের উপস্থিতি মহিলাকে অবাক করেছিল। প্রথম সাক্ষাতে ক্রিসের সৌজন্য ও সামাজিকতায় উপস্থিত সকলে মুগ্ধ হন।

 

এরপর দ্রুতই সম্পর্ক গাঢ় হতে থাকে। দু’জনের মধ্যে মিলও বেরিয়ে আসে প্রচুর— দু’জনেই ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, আবার সহজ-সরল মানসিকতার মানুষ। তবে মহিলা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সম্পর্ককে তিনি খুব জটিল করতে চান না।

 

ঠিক সেই সময়েই আসে মোড় পরিবর্তনের মুহূর্ত। সম্পর্ক শুরু হওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায়, অভিজ্ঞ বাইকার ক্রিস তাঁকে মোটরবাইকে চড়ার আমন্ত্রণ জানান। সুরক্ষার বিষয়ে কড়া নজর রাখা ক্রিস তাঁকে উপহার দেন একটি নতুন হেলমেট। দোকানে হেলমেট পরিয়ে দিতে গিয়ে ক্রিসের কোমল যত্নশীল আচরণে আবেগে চোখে জল চলে আসে মহিলার। তিনি বলেন, এতদিনে কেউ তাঁকে এতটা মমতা দেখায়নি।

 

হেলমেটের পর শুরু হয় গ্লাভস খোঁজা। সেখানেই ঘটে সেই মুহূর্ত, যা মহিলার জীবন বদলে দেয়। গ্লাভস পরে থাকা অবস্থায় ক্রিস তাঁর আঙুল ধরে শোনান ইংরেজি শিশু-কবিতা “Five Little Piggies”। যদিও মহিলাটি ফরাসি-কানাডিয়ান হওয়ায় আগে কখনও শোনেননি এই ছড়াটি। দোকানের মধ্যেই এক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মুখে শিশুসুলভ ছড়ার অভিনব ব্যবহার দেখে তিনি হেসে ফেলেন। আর সেখানেই মনে মনে ঠিক করে নেন—এই মানুষটিই তাঁর জীবনের সঙ্গী হবেন।

 

সেই দিনের পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। রবিবারের সঙ্গী ক্রিস হয়ে ওঠেন প্রতিদিনের সঙ্গী। দীর্ঘ আট বছর ধরে তাঁরা একসঙ্গে আছেন। শুধু বাইকের পেছনে বসে থাকা নয়, মহিলাটি নিজেও বাইক চালানো শিখে ফেলেন এবং কিনে ফেলেন নিজের মোটরসাইকেল। একসঙ্গে ভ্রমণ করেছেন অস্ট্রেলিয়া জুড়ে, এমনকি একটি পুরনো বাসকে রূপান্তরিত করে দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছেন।

 

অবশেষে ২০১৮ সালে সমুদ্রতীরবর্তী এক রেস্তরাঁয় ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের উপস্থিতিতে দু’জনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

 

আজ তাঁদের জীবনে ভালবাসা, মমতা, রসিকতা ও অশেষ ভরসাই হয়ে উঠেছে জীবনের মূল সুর। মহিলার কথায়, “Chris is my ideal partner. He makes me feel supported, loved and cared for and makes me laugh no end. This little piggy could not be happier.”

 

অস্ট্রেলিয়ার এই প্রেমকাহিনি প্রমাণ করে দেয়— সত্যিকারের ভালবাসার শুরু কখনও হতে পারে একটি হেলমেট থেকে, আবার কখনও একটি ছড়ার লুকোনো হাসি থেকে।