আজকাল ওয়েবডেস্ক:  প্রাচীন পৃথিবীতে ছোট পাখি বনভূমির ওপর দিয়ে উড়ে বেড়াত। কোটি কোটি বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া সেই পাখিদের দেহাবশেষ আজ পাথরের মধ্যে আটকে রয়েছে। উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় সাম্প্রতিক এক আবিষ্কার প্রাচীন পাখির বিবর্তন, নরম টিস্যুর গঠন সেই সময় নিয়ে ধারণা করে দিয়েছে। 


এই জীবাশ্মটি আবিষ্কার করেছেন প্যালিওর্নিথোলজিস্ট জিংমাই ও’কনর। বিশাল এক জাদুঘরের সংগ্রহ নিয়ে কাজ করার সময় তাঁর নজরে আসে এই নমুনাটি। ও’কনর বলেন, শানডং তিয়ানিউ মিউজিয়ামে হাজার হাজার পাখির জীবাশ্ম রয়েছে। কিন্তু শেষবার সংগ্রহ দেখতে গিয়ে একটি নমুনা আমাকে সঙ্গে সঙ্গেই চমকে দেয়। আমি তখনই বুঝতে পারি, এটি একেবারে নতুন প্রজাতি।


এই পাখিটির দেহ ছিল অত্যন্ত ছোট, অথচ দাঁতের গঠন ছিল তুলনামূলকভাবে বড় পাখিদের মতো। লম্বা ঠোঁট, ভেতরের দিকে বাঁকানো দাঁত এবং ডানার বিশেষ গঠন একে ক্রিটেশিয়াস যুগের সঙ্গে তুলনা করে। চোখের চারপাশে নরম টিস্যুর ছাপ, পালকের চিহ্ন এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে নতুন আবিষ্কার সামনে এসেছে। 


এদের অনেক প্রজাতির ঠোঁট ছিল সরু, দাঁত ছিল সামনের দিকে ঝোঁকা এবং দেহের মাপ ছিল গাছে বসে খাদ্য খাবারের একেবারে উপযোগী।


ও’কনরের মতে, এই ধরণের পাখির দাঁতের আকার, নখের রকম এবং খুলির গঠন এই পাখিটিকে ছোট আকৃতির প্রজাতিতে ফেলেছে। তবে সবচেয়ে রহস্যজনক আবিষ্কারটি ছিল পাখিটির ঘাড় বরাবর চেপে থাকা একটি ঘন পাথরের স্তূপ। গোলাকার দানা, কাদার মতো সাইজের এবং বড়, ধারালো খণ্ড মিলিয়ে এটি একটি ডিম্বাকার গুচ্ছ তৈরি করেছিল। আকারের বৈচিত্র্য, ঘনত্বের পার্থক্য প্রমাণ করে যে এই পাথরগুলি জীবিত অবস্থায়ই গিলে ফেলেছিল এই পাখিটি।


বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই পাথরের মধ্যে ক্রোমিয়াম, সিসা, তামা ও অন্যান্য উপাদানের মাত্রা ছিল অনেকটা বেশি। এখন পর্যন্ত কোনও ক্রিটেশিয়াস যুগের পাখির জীবাশ্মে গলায় এমন পাথরের বোঝা পাওয়া যায়নি। ঘাড়ের চারপাশে নরম টিস্যুর চমৎকার সংরক্ষণও ইঙ্গিত দেয়, মৃত্যুর পর দেহটি খুব কমই নড়াচড়া হয়েছিল। গবেষকরা মনে করছেন এই পরীক্ষা যদি তারা সঠিকভাবে করতে পারেন তাহলে এই প্রজাতির প্রাচীন পাখির জীবনের এক অনন্য ও রহস্যময় অধ্যায় এবার দ্রুত সামনে।