আজকাল ওয়েবডেস্ক: এশিয়ার উৎপাদনশীল অর্থনীতিগুলো নভেম্বর মাসেও ধীরগতির চাহিদার চাপ থেকে মুক্তি পায়নি। সোমবার প্রকাশিত একাধিক পারচেজিং ম্যানেজারস’ ইনডেক্স (PMI) তথ্য অনুসারে, অঞ্চলের বড় উৎপাদক দেশগুলোর কারখানা কার্যক্রমে পতন অব্যাহত থেকেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি থাকলেও তা অর্ডার বা উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারেনি।

চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ানের মতো বৃহৎ রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতিগুলো কারখানা কার্যক্রমে সংকোচনের কথা জানিয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু উদীয়মান বাজার—ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়া—তুলনামূলকভাবে ভালো বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছে।

চীনের ক্ষেত্রে বেসরকারি PMI দেখিয়েছে নভেম্বর মাসে কারখানা কার্যক্রম পুনরায় সংকোচনের দিকে ফিরে গেছে। এর মাত্র এক দিন আগে প্রকাশিত সরকারি তথ্যেও পরপর অষ্টম মাস কারখানা কার্যক্রম কমার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যদিও গতি কিছুটা কমেছে। ক্যাপিটাল ইকোনমিকস-এর চীনের  অর্থনীতিবিদ জিচুন হুয়াং জানান—চীনা বন্দরগুলোতে কনটেইনার পরিবহন অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরেও প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। তিনি বলেন, “চাহিদা সামান্য হলে বাড়লেও পর্যাপ্ত মজুত এবং দুর্বল উৎপাদন চাপ কমাতে পারেনি। উৎপাদন সূচক চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে।”

হুয়াং আরও জানান, উৎপাদন খরচ ও পণ্যমূল্যের সূচক সামান্য বাড়লেও তা এখনও বহু নিচে অবস্থান করছে, যা চীনে বিদ্যমান ডিফ্লেশনারি চাপের ইঙ্গিত বহন করে।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে যে PMI তথ্য এবং এশিয়ার সাম্প্রতিক বাণিজ্য তথ্যের মধ্যে দৃশ্যমান ব্যবধান রয়েছে। ক্যাপিটাল ইকোনমিকস-এর এশিয়া অর্থনীতিবিদ শিভান টান্ডন জানান, “এশিয়ার অধিকাংশ দেশ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রপ্তানিতে শক্তিশালী বৃদ্ধি দেখিয়েছে। আমাদের বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে, অঞ্চলের রপ্তানিনির্ভর উৎপাদন খাতের নিকটবর্তী ভবিষ্যৎ এখনও ইতিবাচক।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত বহু আমদানি শুল্ক এখনো উৎপাদকদের মাঝে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে। যদিও জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হওয়ায় কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান আশাবাদী হতে শুরু করেছে।

জাপানের PMI দেখায়, নতুন অর্ডার দুই-দেড় বছর ধরে ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। ধীরগতির বিশ্ব  অর্থনীতি, কঠোর কর্পোরেট বাজেট এবং সীমিত পুঁজি বিনিয়োগকে এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কারখানা ও যন্ত্রপাতি বিনিয়োগ গত বছরের তুলনায় ২.৯% বেড়েছে, যদিও আগের তুলনায় এটি শ্লথ।

দক্ষিণ কোরিয়া দ্বিতীয় মাসেও কারখানা কার্যক্রম সংকোচনের তথ্য দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চূড়ান্ত বাণিজ্যচুক্তি হওয়ায় উৎপাদকরা কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছে। আলাদা তথ্য অনুযায়ী, দেশটির রপ্তানি পরপর ছয় মাস ধরে বেড়েছে এবং নভেম্বর মাসে তা বাজার বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রযুক্তিক্ষেত্রে, বিশেষত সেমিকন্ডাক্টর বিক্রি রেকর্ড ছুঁয়েছে। মার্কিন বাজারে গাড়ি বিক্রিও উচ্চতর হয়েছে।

তাইওয়ানের PMI-তেও সংকোচনের প্রবণতা অব্যাহত থাকলেও তা আগের মাসের তুলনায় ধীর গতির ছিল।

অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলো তুলনামূলকভাবে দৃঢ় অবস্থান ধরে রেখেছে। ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম শক্তিশালী উৎপাদন বৃদ্ধি দেখিয়েছে এবং মালয়েশিয়া পুনরায় বৃদ্ধিতে ফিরেছে।

ভারতেও উৎপাদন বৃদ্ধি কিছুটা ধীর হয়েছে, তবে দেশের PMI এখনও শীর্ষস্থানীয় এশীয় উৎপাদকদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। অন্যান্য অর্থনৈতিক সূচকও ইঙ্গিত করছে যে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি দৃঢ়গতির বৃদ্ধি বহাল রেখেছে। সদ্য প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা মূলত শক্তিশালী ভোগব্যয় দ্বারা পরিচালিত।

সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ার উৎপাদন খাত এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকলেও শক্তিশালী রপ্তানি এবং বাণিজ্যচুক্তির অগ্রগতি আগামী মাসগুলোতে পরিস্থিতি উন্নত করতে পারে।