আজকাল ওয়েবডেস্ক: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইতিমধ্যেই কবিতা, প্রবন্ধ কিংবা ছবি বানিয়ে তার ক্ষমতা দেখিয়েছে। এবার গবেষকরা জানালেন আরও এক চমকপ্রদ সাফল্যের কথা। একটি এআই মডেল লিখেছে সম্পূর্ণ ভাইরাসের জেনেটিক কোড। আর এই কোড থেকেই তৈরি হয়েছে কার্যকর ব্যাকটেরিওফেজ, অর্থাৎ এমন ভাইরাস যা ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে দিতে পারে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং আর্ক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এই গবেষণার ফল প্রকাশ করেছেন। একে প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞানীরা তাদের কাজ শেয়ার করেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এটি জীববিজ্ঞানে “প্রথম জেনারেটিভ ডিজাইন করা পূর্ণাঙ্গ জিনোম”।

আরও পড়ুন: ভয়াবহ সাইবার হামলা, সমস্যায় ইউরোপের একাধিক বিমানবন্দর


কীভাবে লিখল এআই জিনোম?

গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে একটি নতুন এআই সিস্টেম। এটি কাজ করে বড় ভাষা মডেলের মতোই। তবে শব্দের পর শব্দ সাজানোর বদলে এটি শিখেছে ডিএনএ-র ব্যাকরণ। প্রায় ২০ লাখ ভাইরাসের জিনোম দিয়ে মডেলটিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে সে শিখেছে কোন জিন কোথায় থাকে, কীভাবে সাজানো হয়।


গবেষকরা নির্দেশ দেন ছোট্ট এক ব্যাকটেরিওফেজকে নকল করতে। এই ভাইরাসে মাত্র ১১টি জিন এবং প্রায় ৫,০০০ ডিএনএ বেস রয়েছে। এটি শুধু নকলই করেনি, বরং নতুন জিন, ছোট করা জিন বা ভিন্নভাবে সাজানো জিন নিয়ে একেবারে পূর্ণাঙ্গ জিনোম প্রস্তাব করেছে।


এর হাজারো প্রস্তাব থেকে বিজ্ঞানীরা বেছে নেন ৩০২টি জিনোম। এগুলো কেমিক্যালি সংশ্লেষণ করে ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। দেখা গেল, এর মধ্যে ১৬টি জিনোম থেকে তৈরি ফেজ বাস্তবে কাজ করছে—তারা ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়ায় ঢুকে সংখ্যায় বেড়েছে এবং শেষ পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ফেটে যেতে বাধ্য করেছে।


অবিশ্বাস্য ব্যাপার হল, এই এআই-তৈরি কিছু ফেজ এমন ই. কোলাই প্রজাতিকেও মেরেছে, যেগুলো প্রাকৃতিক ভাইরাসে আক্রান্ত হয় না। অর্থাৎ এটি  নতুন জেনেটিক পথ আবিষ্কার করেছে, যা জীবন্ত সিস্টেমে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।


সিন্থেটিক বায়োলজিতে এতদিন নতুন ভাইরাস বানাতে হত শ্রমসাধ্য “ট্রায়াল-অ্যান্ড-এরর” পদ্ধতিতে। একটা জিন বদলে পরীক্ষা, ব্যর্থ হলে আবার নতুন চেষ্টা। ক্রেইগ ভেন্টার ২০০৮ সালে প্রথম কৃত্রিম জিনোম বানিয়েছিলেন এভাবেই। তবে এবার সেই প্রক্রিয়াকে অনেকগুণ দ্রুত করে তুলেছে।
ফলত, চিকিৎসা ও কৃষি গবেষণায় এর সম্ভাবনা বিশাল। ব্যাকটেরিওফেজ এখন অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী সংক্রমণের বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে পরীক্ষা চলছে। এআই-তৈরি নতুন ফেজ হলে নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে বিশেষভাবে নকশা করা সম্ভব। কৃষিতেও ফেজ দিয়ে ফসলকে ব্যাকটেরিয়ার রোগ থেকে বাঁচানো যেতে পারে।


তবে আশঙ্কাও কম নয়। ভেন্টার নিজেই বলেছেন, যদি এই ধরনের প্রযুক্তি বিপজ্জনক ভাইরাস যেমন গুটিবসন্ত বা অ্যানথ্রাক্সে প্রয়োগ করা হয়, তবে তা মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োফিজিসিস্ট কেরস্টিন গোপফ্রিশ মন্তব্য করেছেন, এআই হোক বা অন্য প্রযুক্তি—প্রতিটি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিরই দ্বৈত ব্যবহার সম্ভব।


স্ট্যানফোর্ড-আর্ক দল অবশ্য জানিয়েছে, তাদের মডেল কেবল নিরাপদ ব্যাকটেরিওফেজে প্রশিক্ষিত এবং পরীক্ষাও হয়েছে অক্ষতিকর ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়ায়। এই গবেষণা এখনও প্রি-প্রিন্ট পর্যায়ে, তাই পরবর্তী ধাপ হলো পিয়ার রিভিউ এবং স্বাধীনভাবে পুনরাবৃত্তি। তবু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এআই দিয়ে সম্পূর্ণ কার্যকর ভাইরাস বানানোর এই ঘটনা বায়োটেকনোলজির নতুন যুগের সূচনা করেছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এআই এমন ভাইরাস তৈরি করেছে, যা জীবন্ত ব্যাকটেরিয়ায় কাজ করেছে। যদিও এটি “জীবন সৃষ্টি” নয়, তবু জীববিজ্ঞানে এক বিরাট মাইলফলক।