আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্বন্ধ করে বিয়ে- যা একসময় সামাজিকভাবে স্বীকৃত ও প্রায় প্রশ্নাতীত ছিল, আজ ক্রমশই সমালোচনার মুখে। বিশেষ করে শিক্ষিত ও পেশাগতভাবে স্বনির্ভর মহিলারা এই প্রথার সঙ্গে জুড়ে থাকা অসম ও অযৌক্তিক প্রত্যাশার বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যম সেই প্রতিবাদের প্রধান মঞ্চ হয়ে উঠেছে। এবার একটি ভাইরাল ইনস্টাগ্রাম ভিডিও আবারও এই বিতর্ককে সামনে এনে দিল।
এক ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী তাঁর এক বন্ধুর সম্বন্ধ করে বিয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে পরপর তিনটি ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে আজও সমাজে কতটা গভীরভাবে পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা রয়েছে।
ভিডিওতে যাঁর কথা বলা হয়েছে, তিনি শিগগিরই একজন কার্ডিয়াক সার্জন হতে চলেছেন। দীর্ঘদিনের পড়াশোনা, কঠোর পরিশ্রম ও পেশাগত সাফল্য সত্ত্বেও, বিয়ের আলোচনায় তাঁকে যে ধরনের প্রশ্ন ও শর্তের মুখোমুখি হতে হয়েছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক।
প্রথম ঘটনায়, এক পাত্রপক্ষ নাকি জানতে চেয়েছিল- ভবিষ্যতে তিনি কি প্রতিদিন প্রায় ৩০ জনের জন্য রান্না করতে পারবেন? কারণ, তাদের ছেলে রান্না বা সংসারের কোনও কাজ জানেন না। একজন উচ্চশিক্ষিত, কর্মরত চিকিৎসকের কাছেও গৃহস্থালির সমস্ত দায়িত্ব একতরফাভাবে চাপিয়ে দেওয়ার এই প্রত্যাশা বহু মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। প্রশ্ন উঠেছে কেন আজও মহিলার পেশাগত পরিচয় উপেক্ষা করে তাঁকে প্রথমে ‘গৃহিণী’ হিসেবেই দেখা হয়?
দ্বিতীয় ঘটনাটি আরও সংবেদনশীল। ওই মহিলা জানিয়েছিলেন, বিয়ের পর তিনি নিজের বাবা-মায়ের দেখভাল করতে চান। উল্লেখযোগ্যভাবে, তিনি একমাত্র সন্তান। কিন্তু এই ইচ্ছার কারণেই নাকি সেই সম্বন্ধটি বাতিল হয়ে যায়। এই ঘটনাটি আবারও সামনে এনেছে সেই চিরাচরিত দ্বৈত মানসিকতা যেখানে পুরুষের বাবা-মায়ের দায়িত্ব নেওয়া স্বাভাবিক বলে ধরা হয়, কিন্তু মহিলার ক্ষেত্রে তা ‘সমস্যা’ হিসেবে দেখা হয়।
তৃতীয় ঘটনায়, এক সম্ভাব্য পাত্র নাকি বিয়ের শর্ত হিসেবে ওই মহিলাকে তাঁর শরীরের ট্যাটু তুলে ফেলতে বলেছিলেন। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের ওপর এমন হস্তক্ষেপকে অনেকেই ‘চরম নিয়ন্ত্রণমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এই তিনটি প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করেছেন ওই মহিলা।
ভিডিওটি nidhi_rathi.15 নামের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল থেকে পোস্ট হওয়ার পর মাত্র এক দিনের মধ্যেই প্রায় হাজারখানেক ভিউ পায়। কমেন্ট সেকশন ভরে যায় সমালোচনা ও সমর্থনে। অনেকেই এমন দাবিদাওয়ার ‘দুঃসাহস’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিশেষ করে চিকিৎসা পেশার বহু মহিলা নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানান, একই পেশার মধ্যে বিয়ে হলেও পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে মুক্তি মেলে না।
অনেক নেটিজেন মহিলাদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দেন বিয়ের জন্য তাড়াহুড়ো না করে আর্থিক ও মানসিক স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার দিতে। সমতা, সম্মান ও পারস্পরিক বোঝাপড়াহীন কোনও সম্পর্কে আপস না করার কথাও জোর দিয়ে বলা হয়।
এই ভাইরাল ভিডিও নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে বিয়ে কি সত্যিই বদলাচ্ছে, নাকি কেবল তার মোড়কটাই আধুনিক হয়েছে? সমাজ কি আদৌ প্রস্তুত মহিলাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সমানাধিকারের স্বীকৃতি দিতে নাকি ‘সংস্কার’-এর নামে সেই অধিকার এখনও খর্বই থেকে যাবে?
