আজকাল ওয়েবডেস্ক: পণ না দেওয়ায় দিনের পর দিন নির্মম শারীরিক নির্যাতন। এক বাড়িতে দুই বোনের বিয়ে হয়। দুজনেই বিয়ের কয়েক মাস পর থেকে চরম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাও আবার নিজেদের সন্তানদের সামনেই। এর মাঝেই এক বোনের চরম পরিণতি হল। 

 

বেধড়ক মারতে মারতেই এক তরুণীর গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দিলেন স্বামী। গায়ে আগুন নিয়ে প্রাণপণে চিৎকার করে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যান তিনি। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। তরুণীর মর্মান্তিক পরিণতি হয় হাসপাতালে। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই শ্বশুরবাড়ির অকথ্য নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ওই তরুণীর দিদি। থানায় অভিযোগ দায়ের করে শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। 

 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে গ্রেটায় নয়ডায়। পণের দাবিতে এক তরুণীতে নির্মম শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে। এমনকী মারতে মারতে তাঁকে সিঁড়ি থেকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পণের জন্য তরুণীর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন স্বামী। অবশেষে মৃত্যু হয় তরুণীর। 

 

তরুণীর নাম, নিক্কি। তাঁর দিদিও ওই বাড়ির এক সদস্যের সঙ্গে বিয়ে করেন। তিনি জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে নিক্কির বিয়ে হয় সিরসা গ্রামে। বিয়ের ছয় মাস পর থেকেই শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। নিক্কি ও দিদির উপর চরম শারীরিক নির্যাতন করতেন শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। পণ হিসেবে দুজনের থেকে ৩৬ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন তাঁরা। 

 

নিক্কির দিদি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। মারতে মারতে সন্তানের চোখের সামনেই নিক্কির গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেন।‌ বাঁচার জন্য গায়ে আগুন নিয়েই সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিনি শেষরক্ষা হয়নি। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় নিক্কির মৃত্যু হয়েছে। 

 

আরও পড়ুন: 'স্ত্রী নিখোঁজ, খুঁজে দিন প্লিজ', থানায় জানিয়েই ফোন বন্ধ স্বামীর, বাড়ির উঠোনে ছড়ানো ন্যাপথলিন দেখেই ভয়ঙ্কর খুনের কিনারা পুলিশের

 

নিক্কির উপর শারীরিক নির্যাতনের একাধিক ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা গেছে, স্বামী বীপিন ও আরও এক মহিলা একের পর এক চড়, থাপ্পড়, কিল, ঘুষি মারতে থাকেন নিক্কিকে। এরপর গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেন। সেই অবস্থায় সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নীচে নেমে যান। সেখানে একজন নিক্কির গায়ে জল ছুড়ে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। 

 

নিক্কির দিদি জানিয়েছেন, বিয়ের সময় মনের মতো পণ না পাওয়ায় দুই বোনের উপরেই অকথ্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। স্বামীরাও তাতে যোগ দিতেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তিনিও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। তিনি জানান, সে রাতে বারবার বলা হচ্ছিল, 'আমরা একজনের পণ পেয়েছি। আরেকজনের পণ কবে দেওয়া হবে? সবচেয়ে ভাল হয়, তোমরা মরে যাও। আমরা আবার বিয়ে করব।' শারীরিক নির্যাতনের জেরে সারারাত অচৈতন্য অবস্থায় ছিলেন নিক্কির দিদি কাঞ্চন। 

 

পুলিশ আধিকারিক সুধীর কুমার জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতেই হাসপাতাল থেকে থানায় ফোন করে জানানো হয়। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় এই তরুণী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতেই তাঁকে সফদরজং হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। হাসপাতালে যাওয়ার পথেই তরুণীর মৃত্যু হয়। তাঁর দিদির অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই নিক্কির স্বামী বীপিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিক্কির শ্বশুর, শাশুড়ি ও দেওরের খোঁজেও তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।