আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারে কয়েক দশক ধরে যাদব পরিবার একটি রাজনৈতিক ইউনিট হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৭৩ সালের ১ জুন লালু এবং রাবড়িদেবী বিবাহের পর সাত কন্যা এবং দুই পুত্রের জন্ম দেন। রাবড়ির পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। রাবড়ির কাকা প্রথমে অনিচ্ছুক ছিলেন, কিন্তু লালুর বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হওয়ার পর রাবড়ির বাবা বিয়েতে অনুমতি দেন।
লালু এবং রাবড়ি দু’জনেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হন এবং একসঙ্গে তাঁরা জাতীয় জনতা দলের (আরজেডি) উত্থানকে রূপ দেন। কিন্তু ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে দলটি মাত্র ২৫টি আসন জয়ের পর, পরিবারের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য ভেঙে যায়। তাদের মেয়ে রোহিণী আচার্য প্রকাশ্যে তেজস্বী যাদবের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনে রাজনীতি থেকে সরে আসার ঘোষণা করেন। এরপরেই পাটনার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বেশ কয়েকজন বোনও বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এর পরেই তেজপ্রতাপ যাদব রোহিণীর পক্ষে লড়াইয়ে নামেন। যাদব পরিবারের কলহ জাতীয় বিষয় হয়ে উঠেছে।
এই সঙ্কটের সময় লালু প্রসাদ যাদব এবং রাবড়ি দেবীর নয় সন্তানের সম্পর্কে বিস্তারিত আজকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হল। তাঁরা কারা, কী করেন এবং আজ তাঁরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন-
সাত কন্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় মিসা এবং রোহিনী
জ্যেষ্ঠ সন্তান মিসা ভারতীর জন্ম ১৯৭৬ সালে। তখন লালু জরুরি অবস্থার সময় জেলে ছিলেন। তাঁর নাম রাখা হয়েছিল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইন (MISA) দ্বারা অনুপ্রাণিত। পাটনা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস স্নাতক ডিগ্রিধারী মিসা ১৯৯৮ সালে লালু যখন কারাবন্দি ছিলেন, তখন তিনি রাবড়ি দেবীকে শাসনকার্যে সহায়তা করেছিলেন। ক্রমে তিনি পরিবারের সবচেয়ে দৃশ্যমান রাজনৈতিক মুখদের একজন হিসেবে আবির্ভূত হন। পাটলিপুত্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বর্তমানে সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি শৈলেশ কুমারের সঙ্গে বিবাহিত। যিনি একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং ব্যবসায়ী।
তাঁর বোন রোহিনী আচার্য একজন ডাক্তার। তাঁর স্বামী সমরেশ সিং পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। দু’জনে থাকেন সিঙ্গাপুরে। ২০২২ সালে লালুকে কিডনি দান করার পর পরিচিতি পান রোহিনী। তিনি সরণ থেকে সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং আরজেডির পরাজয়ের পর ঝড়ের কবলে পড়েন। তেজস্বীর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের তাঁকে অপমান করা এবং দলীয় বিষয়গুলি পরিচালনা না করার অভিযোগ আনায় তিনি রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং পাটনার বাড়ি ছেড়ে চলে যান।
মধ্যম কন্যা: চন্দা, রাগিনী এবং হেমা
আইন স্নাতক চন্দা সিং রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন, মূলত পারিবারিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। তিনি বিক্রম সিংয়ের সঙ্গে বিবাহিত। যিনি একজন পাইলট।
রাগিনী যাদব প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী কোটায় রাঁচির বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হন কিন্তু ডিগ্রি অর্জন করেননি। সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী রাহুল যাদবের সঙ্গে বিবাহিত। রাগিনী বেশিরভাগ সময় রাজনীতির বাইরে ছিলেন, যদিও এই দম্পতি ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাঁদের দু’জনের একটি ছেলে রয়েছে।
বিটেক ব্যাকগ্রাউন্ডের হেমা যাদব, জনসাধারণের কাছে আরও কম পরিচিত। মানিকন্ট্রোলের মতে, তিনি তেজ যাদবের সঙ্গে বিবাহিত। সক্রিয় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ছাড়াই হেমা মূলত তাঁর পারিবারিক জীবনের উপর মনোযোগী।
ছোট মেয়ে: অনুষ্কা এবং রাজলক্ষ্মী
অনুষ্কা ‘ধন্নু’ রাও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সঙ্গে জড়িত এবং আইন নিয়েও পড়াশোনা করেছেন বলে জানা গিয়েছে। তিনি চিরঞ্জীব রাওয়ের সঙ্গে বিবাহিত, যিনি বিধায়ক এবং হরিয়ানার প্রাক্তন মন্ত্রী অজয় সিং যাদবের ছেলে।
ছোট মেয়ে রাজলক্ষ্মী একজন ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক। তিনি তেজ প্রতাপ সিং যাদবের স্ত্রী। যিনি প্রাক্তন সাংসদ এবং প্রয়াত সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদবের প্রপৌত্র।
দুই পুত্র: তেজ প্রতাপ এবং তেজস্বী
১৯৮৮ সালে গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী তেজ প্রতাপ ২০১৫ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। মহুয়া থেকে জয়ী হন এবং পরে বিহারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবন যথেষ্ট উত্তাল ছিল।
বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নাতনী ঐশ্বর্য রাইয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে ২০১৮ সালে বিয়ের পরপরই তিনি আলাদা হয়ে যান। ২০২৫ সালে লালু তাঁকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’-এর কারণে দল এবং পরিবার থেকে বহিষ্কার করেন। তেজ প্রতাপ তাঁর নিজস্ব দল জনশক্তি জনতা দল (জেজেডি) প্রতিষ্ঠা করেন।
ছোট ছেলে ৩৫ বছর বয়সী তেজস্বী যাদব। দ্বাদশ শ্রেণীর পর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছেড়ে দেন এবং রাজনীতিতে প্রবেশের আগে কিছু সময়ের জন্য পেশাদারভাবে ক্রিকেট খেলেন। তিনি বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী এবং পরে বিরোধী দলের নেতা হন। ২০২৫ সালের নির্বাচনে মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। র্যাচেল গোডিনহো (বর্তমানে রাজশ্রী যাদব) কে বিয়ে করে তিনি দুই সন্তানের জনক।
বর্তমান সঙ্কটের বেশিরভাগই তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী, রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় যাদব এবং প্রাক্তন ক্রিকেটার রমিজ নেমাত খানের বিরুদ্ধে অভিযোগের উপর কেন্দ্রীভূত। যাদের বিরুদ্ধে রোহিণী সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করার এবং পরিবার ও দলের মধ্যে বিভেদ তৈরি করার অভিযোগ করেছেন।
