আজকাল ওয়েবডেস্ক: অসমের সবুজ মাঠ থেকে শুরু করে বেঙ্গালুরুর উপকণ্ঠ এবং রাজস্থানের গ্রামীণ অঞ্চল পর্যন্ত এক ভয়ঙ্কর শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে শুরু করেছে, যা সকলের বুক কাঁপিয়ে দিচ্ছে। এটি কোনও যন্ত্র বা সাইরেনের চিৎকার নয়। এটি রাসেলের ভাইপার বা চন্দ্রবোড়ার ডাক, দেশের অন্যতম মারাত্মক সাপ। যা এখন একটি ভয়ঙ্কর ডাকনাম অর্জন করেছে- ‘মৃত্যুর বাঁশি’।
চন্দ্রবোড়ার হিস হিস শব্দ প্রেসার কুকারের বাঁশির মতোই তীব্র, আকস্মিক এবং অস্থিরজনক। এই সাপের উপদ্রব রয়েছে যে এলাকায় এমন স্থানে যারা বাস করেন তাদের জন্য এই শব্দ একটি ভয়াবহ সতর্কীকরণ যে, বিপদ ঘনিয়ে আসছে এবং পালিয়ে যাওয়াই একমাত্র বিকল্প।
রাসেলস ভাইপার (Daboia russelii) বা চন্দ্রবোড়া কোনও বিরল প্রজাতির সাপ নয়। এটি ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়েই এর দেখা পাওয়া যায় সচরাচর। কোবরা, কালাচ এবং স-স্কেলড ভাইপারের পাশাপাশি বেশিরভাগ মারাত্মক কামড়ের জন্য দায়ী কুখ্যাত ‘বিগ ফোর’ সাপের একটি চন্দ্রবোড়া। এটি কৃষিজমি, তৃণভূমি এবং এমনকি শহরাঞ্চলেও বেড়ে ওঠে। কেন? এর প্রাথমিক শিকার হল ইঁদুর, এবং যেখানে মানুষ আছে, সেখানে ইঁদুরও আছে।
এই সাপের বিষ হিমোটক্সিক অর্থাৎ এটি রক্ত এবং টিস্যুগুলিকে অকেজো করে দেয়। যার ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত, জমাট বাঁধা এবং অনেক ক্ষেত্রে কিডনি ব্যর্থতা দেখা দেয়। এর মাত্র ৪০ মিলিগ্রাম বিষ একজন মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। একটি প্রাপ্তবয়স্ক সাপ একবার কামড়ে তিনগুণেরও বেশি পরিমাণে বিষ শরীরে ঢালতে পারে।
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" data-instgrm-version="14">
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" target="_blank" rel="noopener">
View this post on Instagram
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" target="_blank" rel="noopener">A post shared by Adil Khan (@wildsatpura)
সাম্প্রতিক মাসগুলিতে সর্পদংশনের ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অসমের শোণিতপুর জেলায় ১৩ বছর বয়সী এক কিশোর চন্দ্রবোড়ার কামড়ে মারা গিয়েছে। সাপের কামড় খেয়ে হিস হিস শব্দ শুনতে পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়তে শুরু করেছিল কিশোরটি। এর ফলে তার শরীরে বিষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। ছেলেটির মৃত্যুতে গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এলাকাবাসী এতটাই আতঙ্কিত যে বাড়ির বাইরে বেরনোর সময়ও তাঁদের মনে হয় যে চন্দ্রবোড়ার ডাক শুনতে পাচ্ছেন।
কর্ণাটক এবং রাজস্থানের হাসপাতালগুলিতে সাপের কামড়ের ঘটনা বেড়েছে। যার নেপথ্যে এই অত্যন্ত বিষধর প্রজাতির সাপটিই দায়ী। বর্ষাকালে যখন সাপগুলি গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে তখন এই ধরণের ঘটনা আরও বৃদ্ধি পায়।
প্রাণঘাতী ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, সর্পবিশারদদের মতে চন্দ্রবোড়া সহজাতভাবে আক্রমণাত্মক নয়। এটি মানুষকে তাড়া করে না। কিন্তু যদি নিজেকে কোনওভাবে কোণঠাসা মনে করে বা দুর্ঘটনাক্রমে কেউ পা দিয়ে দিলে নিজেকে রক্ষা করতে আক্রমণ করে সাপটি।
আঘাত করার আগে, ভাইপারটি 'S' আকৃতিতে কুণ্ডলী পাকিয়ে যায়, তার উপরের অংশটি উঁচু করে হিস হিস শব্দ করতে থাকে। এটি কেবল একটি ভয় দেখানোর কৌশল নয়; এটি পিছু হটার সতর্কবার্তা।
সাতপুরার একজন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ আদিল খান সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন যেখানে চন্দ্রবোড়াকে হিস হিস শব্দে ডাকতে শোনা যাচ্ছে। গ্রামীণ শান্ত পরিবেশে সেই শব্দ কতটা তীব্র হতে পারে তা ধরা পড়েছে ভিডিওতে।