আজকাল ওয়েবডেস্ক: দুঃস্বপ্নের ভূস্বর্গ। গত মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগাঁওয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। যাঁদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে অনেকেই দাবি করেন যে, জঙ্গিরা বন্দুক উঁচিয়ে ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান বা ধর্মবিশ্বাসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল। অর্থাৎ, গুলি করে খুনের আগে অনেককেই 'কলমা' পড়তে বলেছিল জঙ্গিরা। কেউ পড়তে পারায় বেঁচে যান, আর কাউকে 'কলমা' না পড়তে পারায় গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যান।
কলমা কী?
ইসলামে 'কলমা' বলতে মৌলিক বিশ্বাসের প্রকাশ বা ঘোষণা বোঝায়। এটি একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ 'কথা' বা 'বাক্য। ইসলামে, কলমাগুলি হল ইসলামের প্রথম স্তম্ভ 'শাহাদা' বা বিশ্বাসের ঘোষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামের "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ" খুবই তাৎপর্যবাহী। যার মানে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মহাম্মদ আল্লাহর রাসূল - এই শব্দগুলি বিশ্বজুড়ে সকল ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র।
ইসলামে কলমা বা বিশ্বাসের এই ঘোষণা নবজাতকের কানে ফিসফিসিয়ে বলা হয়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় পুনরাবৃত্তি করা হয় এবং মৃত্যুর সময় একজন ধর্মবিশ্বাসীর ঠোঁটে থাকার আশা করা হয়। এটি এক ঈশ্বর এবং তাঁর শেষ বার্তাবাহক, নবী মহাম্মদের প্রতি বিশ্বাসের ঘোষণা।
ইসলামে ছয়'টি কালেমা রয়েছে।
কালেমা তাইয়্যিব - আল্লাহর একাত্ব এবং মহাম্মদের নবুওয়াত ঘোষণা করে।
কালেমা শাহাদা - অনুগত্যের সাক্ষ্যকে পুনর্ব্যক্ত করে, যা প্রায়শই ইসলাম গ্রহণের সময় পাঠ করা হয়।
কালেমা তামজীদ - আল্লাহর মহত্ত্ব এবং করুণাকে মহিমান্বিত করে।
কালেমা তাওহীদ - আল্লাহর একত্ব এবং জীবন-মৃত্যুর উপর তাঁর ক্ষমতার কথা বলে।
কালেমা আস্তাগফার - জানা এবং অজানা, উভয় পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।
কালেমা রাদ্দে কুফর - অবিশ্বাসী এবং পাপপূর্ণ কর্মকে প্রত্যাখ্যান করে।
এই কালেমাগুলি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এই ছয়'টি কালেমা ইসলাম বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু। এগুলি মুসলমানদের আল্লাহর একত্ব, নবীর গুরুত্ব এবং ক্ষমা প্রার্থনা এবং পাপ থেকে দূরে থাকার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। এগুলি পাঠ করা মুসলমানদের চিন্তাভাবনা, অনুতাপ এবং তাদের আনুগত্যকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
আসামের একজন অধ্যাপক দেবাশীষ ভট্টাচার্য, যিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে পাহেলগাঁও গিয়েছিলেন, তিনিই দাবি করেছেন যে- জঙ্গিদের বন্দুকের নলের সামনে কলমা পাঠ করায় তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। যখন গুলির শব্দে মুখোরিত চারদিক, তখন অন্যরা পবিত্র শ্লোক পাঠ করায় ব্যস্ত ছিলেন, তা দেখে তিনিও তাতে যোগ দিয়েছিলেন। এতে কাজ হয়, প্রাণে বেঁচে যান অধ্যাপক ভট্টাচার্য।
দেবাশিসবাবু বলেছেন, "আমার চারপাশের সবাই ('কলমা') পড়ছিলেন, আমিও তা পাঠ করতে থাকি। এক জঙ্গি আমার মাথার দিকে বন্দুক তাক করেছিল, আমি যা বলছি তা শুনতে পেয়ে সে চলে যায়। আমি কেবল 'লা ইলাহি...' পাঠ করছিলাম যা সবাই করছিল।"
