আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির রাস্তায় এক অটোযাত্রাই বদলে দিল এক বিদেশি পর্যটকের ভারতের অভিজ্ঞতা। সম্প্রতি এক ট্রাভেল ভ্লগারের শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, এক প্রবীণ অটোচালকের সঙ্গে অনায়াস ইংরেজিতে কথোপকথনে মেতে উঠেছেন অস্ট্রেলিয়ার এক যাত্রী। অটোচালকের সাবলীল ইংরেজি, জীবনের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এবং আন্তরিকতা- সব মিলিয়ে ভিডিওটি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।

ভিডিওর শুরুতেই অটোচালক যাত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কি অস্ট্রেলিয়া থেকে?” প্রশ্নে অবাক হয়ে যাত্রী পাল্টা জানতে চান, তিনি কীভাবে বুঝলেন। হাসিমুখে অটোচালকের উত্তর, “আমি অস্ট্রেলিয়ায় ছিলাম। মেলবোর্নে শেফ হিসেবে কাজ করতাম- রান্না।” এই কথোপকথনেই স্পষ্ট হয়ে যায়, সাধারণ অটোচালকের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বৈচিত্র্যময় জীবনের গল্প।

কথা প্রসঙ্গে যাত্রী জানতে চান, ভারতে ফিরে এসে তিনি কোনও  ব্যবসা করেন কি না। তাতে অটোচালকের উত্তরই ভিডিওর সবচেয়ে আলোচিত অংশ হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, “না, আমি ব্যবসায়ী নই। আমি আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকা একজন মানুষ। আমি টাকার মানুষ নই। টাকা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়, কিন্তু জীবন টাকার জন্য নয়, বন্ধু। ড্রাইভার হিসেবে কাজ করলে বেশি আনন্দ পাওয়া যায়।” এই জীবনদর্শনই নেটিজেনদের গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।

কথোপকথন এখানেই থামেনি। গন্তব্যে পৌঁছনোর আগে অটোচালক যাত্রীকে তাঁর প্রিয় চায়ের দোকানে এক কাপ চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। অস্ট্রেলীয় যাত্রী হাসিমুখে সেই প্রস্তাবে সাড়া দেন। এরপর ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি নিজস্ব রেসিপিতে চা তৈরি করছেন- নিজের হাতে মেশানো উপকরণে বানানো বিশেষ চা। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে চলে আরও কিছু কথাবার্তা, যা মুহূর্তটিকে করে তোলে আরও মানবিক ও উষ্ণ।

বিদায়বেলায় যাত্রী অটোচালককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,“আপনার পরিশ্রমের জন্য কিছু টাকা। সত্যিই কৃতজ্ঞ। নমস্কার।” ছোট্ট এই সৌজন্য বিনিময়ও দর্শকদের মন ছুঁয়েছে।

ভিডিওটি প্রকাশের পর থেকেই হাজার হাজার ভিউ ও মন্তব্য জমা পড়েছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এই অটোচালকের ইংরেজি আমার বর্তমান ম্যানেজারের থেকেও ভালো।” আরেকজন মন্তব্য করেন, “আজকের শিক্ষা- ‘টাকা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়, জীবন টাকার জন্য নয়।’”
কেউ লিখেছেন, “এই ভারতকেই আমরা ভালোবাসি ও সম্মান করি। এটাই আমাদের দেশের মান বাড়ানোর পথ।” অন্য এক নেটিজেনের কথায়, “কাউকে দেখে বিচার করা যায় না- এই ভদ্রলোক তার প্রমাণ।” আরও একজন বলেন, “দিন শুরু করার জন্য এর চেয়ে হৃদয়ছোঁয়া ভিডিও হতে পারে না।” অনেকে তো লিখেছেন, “এই কাকু গোটা দেশকে গর্বিত করলেন।”

ভাষাজ্ঞান বা বিদেশে কাজের অভিজ্ঞতা নয়, বরং জীবনের প্রতি অটোচালকের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি, সরলতা ও অতিথিপরায়ণতাই এই ভিডিওকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। অর্থের বাইরে গিয়ে আনন্দ, সম্পর্ক আর মানবিকতাকে গুরুত্ব দেওয়ার বার্তাই যেন ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাল ‘চা-পে-চর্চা’য়।