আজকাল ওয়েবডেস্ক: হায়দরাবাদের গাচিবৌলি আইটি করিডরে গাঁজা বিক্রির চক্র ধরতে গিয়ে ঘটে গেল এক অদ্ভুত ঘটনা। গাঁজার হ্যান্ডলারকে ধরতে গিয়ে চমকে গেলেন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আধিকারিকরাই। দেখা গেল, ওই হ্যান্ডলার যাকে গাঁজা পাচার সেই ব্যক্তি সঙ্গে স্ত্রী এবং চার বছরের সন্তানকে নিয়ে গাঁজা কিনতে এসেছিলেন। পরে ওই দম্পতির মধ্যে স্বামীকে গাঁজা সেবনের জন্য আটক করা হয়। তবে ছেড়ে দেওয়া হয় মা ও শিশুকে। শনিবার এই অভিযান চালিয়েছিল সদ্যগঠিত এলিট অ্যাকশন গ্রুপ ফর ড্রাগ ল’ এনফোর্সমেন্ট।
অভিযানে মোট ১৪ জন গাঁজা সেবনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককেই ড্রাগ ডি-অ্যাডিকশন সেন্টারে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য পাঠিয়েছেন আধিকারিকরা। ঈগল নামক সংস্থার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট চেন্নুরি রূপেশ সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা সন্দীপ নামের এক গাঁজা হ্যান্ডলারকে নজরে রেখেছিলেন। খবর ছিল, গাচিবৌলি এলাকায় সন্দীপ আইটি এবং প্রাইভেট সেক্টরের কর্মীদের কাছে গাঁজা বিক্রি করত।
আরও পড়ুন: মধু ছুঁলেই ‘খপাৎ’, মৌমাছিকে এই বিশেষ অস্ত্রে পরিণত করল চিন, পৃথিবী এবার ঘোর বিপদের মুখে...
তদন্তে জানা যায়, সন্দীপ প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫ কেজি গাঁজা সরবরাহ করত, যেটি ১০০টি ছোট প্যাকেটে ভাগ করা থাকত (প্রতিটি প্যাকেট ৫০ গ্রাম)। প্রতি প্যাকেটের দাম ছিল ৩,০০০ টাকা। সন্দীপের কাছে একশোর বেশি নিয়মিত ক্রেতার একটি ডেটাবেস ছিল। যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত হোয়াটসঅ্যাপে সাংকেতিক বার্তার মাধ্যমে। সেখানে লেখা থাকত, ‘ভাই, বাচ্চা এসে গেছে ভাই’।
জানা গিয়েছে, শনিবার সিভিল ড্রেসে থাকা ওই সংস্থার আধিকারিকরা এক ব্যাঙ্কের কাছে লুকিয়ে ছিলেন। সেখানে গাঁজা কেনাবেচা হত বলে খবর ছিল তাঁদের কাছে। মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যে ১৪ জন ক্রেতাকে হাতেনাতে ধরেন তাঁরা। প্রত্যেকের ড্রাগ টেস্টে গাঁজা সেবনের প্রমাণ মেলে। এই তালিকায় একজন অনলাইন ট্রেডার, একজন স্থপতি, একজন রিয়েল এস্টেট সেলস এক্সিকিউটিভ, আইটি কর্মী এবং এক ছাত্রও রয়েছেন। সকলকেই ডি-অ্যাডিকশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
তবে চাঞ্চল্য ছড়ায় তখনই যখন দেখা যায়, এক দম্পতি তাঁদের চার বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গাঁজা কিনতে এসেছেন। স্বামী গাঁজা সেবনের পরীক্ষায় পজিটিভ হলেও মা ও শিশুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ধরা পড়েন আরও এক দম্পতি, তাঁরাও গাঁজা সেবনের জন্য পজিটিভ। জানা গিয়েছে, মূল অভিযুক্ত সন্দীপ বর্তমানে পলাতক। তবে তদন্ত চলছে জোরকদমে। সংস্থার আধিকারিকরা গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মোবাইল থেকে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, ফোন নম্বর ও অন্যান্য ডিজিটাল প্রমাণ ধরে ধরে বিশ্লেষণ করছেন।
আরও পড়ুন: ৯ মাস ধরে বুঝতেই পারেননি, হঠাৎ সামনে এল অন্তসত্ত্বা হওয়ার খবর, ১৭ ঘণ্টায় বদলে গেল তরুণীর জীবন
পাশাপাশি, একশোর বেশি ক্রেতার ডেটাবেস পরীক্ষা করে গোটা চক্রের সন্ধান চলছে। চেন্নুরি রূপেশ বলেন, ‘ডেটাবেসে থাকা বাকি ৮৬ জনকে স্বেচ্ছায় ডি-অ্যাডিকশন চিকিৎসা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। না হলে পরবর্তীতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে’। ঈগল নামক ওই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, আইটি করিডর থেকে মাদকের প্রভাব নির্মূল করতে লক্ষ্যভিত্তিক নজরদারি ও ধারাবাহিক অভিযান চালানো হবে। যুবক-যুবতী, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের গাঁজা ও মাদক থেকে দূরে থাকার বার্তা দিয়েছেন আধিকারিকরা। তাঁদের কথায়, ‘মাদক আসক্তির সঙ্গে অপরাধ ও সমাজবিরোধী কাজের যোগ রয়েছে’।
