আবু হায়াত বিশ্বাস, আমেদাবাদ: তিরিশ বছর গুজরাটে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকায় জনমানসে ক্ষোভ তৈরি হলেও ভোটে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। বছরের পর বছর এই রাজ্যে জিতে আসছে বিজেপি। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু শক্তিতে পরিণত হয়েছে। দু’ বছর পর রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার আগে দলকে দিশা দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে হাত শিবিরে। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি ও এআইসিসি অধিবেশন আয়োজন করে গুজরাট কংগ্রেসকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি সরকাররের বিরুদ্ধে পথে নামার বার্তা দেওয়া হচ্ছে দলীয় নেতা কর্মীদের। বিজেপি সরকারের আমলে হওয়া দুর্নীতি নিয়ে সরব হচ্ছেন দলের নেতারা। সম্প্রতি গুজরাট বিধানসভায় কংগ্রেস নেতা অমিত চাভদা অভিযোগ তুলেছেন, রাজ্যে দুর্নীতি, ভয় এবং ক্ষুধা রাজ্যকে গ্রাস করেছে। গুজরাটের বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা চাঁদাবাজি, জমি লেনদেন এবং মোটা অংকের ঘুষ আদায়ের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, মহাত্মা গান্ধীর গুজরাটে আইনের শাসন কেবল কাগজে। ঘুষের রমরমা, গ্রমে গ্রামে অবাধে বিক্রি হচ্ছে চোলাই মদ। কংগ্রেস স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, বিরোধী শাসিত রাজ্যে দুর্নীতি নিয়ে সরব হয় বিজেপি, অথচ গুজরাটের বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তা চেপে দেওয়া হয়।
কংগ্রেস নেতারা বলছেন, বিজেপির ‘গুজরাট মডেল’ আসলে গিমিক ছাড়া কিছু নয়। রাজ্যের বড় অংশের মানুষের কাছে এখনও সমস্ত সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দিতে পারেনি বিজেপি সরকার। দুর্নীতি, জালিয়াতি বেড়েছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জনগণ জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। রাজ্যের উন্নয়নের জন্য নতুন মডেল তৈরি করে বিজেপিকে সরানোর কাজ করবে।
এক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের কথায়, কংগ্রেস হাইকমান্ড জানে যে দেশের নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গুজরাট থেকেই শুরু হয়। অতএব, যদি কংগ্রেস গুজরাট মডেল ভেঙে দেয়, তাহলে এর প্রভাব পুরো দেশে পড়বে। কংগ্রেস এখানে একটি নতুন মডেল তৈরি করে বিজেপির শিকড় দুর্বল করতে চায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষক রশিদ কিদওয়াই বলছেন, ‘কংগ্রেস তার পুরনো ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করতে চায়।’ স্বাধীনতার পর থেকে, প্রতি বছর একটি নতুন রাজ্যে কংগ্রেস অধিবেশন অনুষ্ঠিত হত, কিন্তু জরুরি অবস্থা জারির পর এই ঐতিহ্য ভেঙে যায়। ২০০২ সালে সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর, সম্মেলনটি কেবল দিল্লিতেই অনুষ্ঠিত হতে শুরু করে। এখন কংগ্রেস এই চিন্তাভাবনার বদল করেছে। মনে করছে, একটি নতুন রাজ্যে একটি সম্মেলন আয়োজন করলে দলের ভাবমূর্তি বদলে যাবে এবং শক্তিশালী হবে রাজ্য কংগ্রেস। বিজেপির গড় গুজরাট থেকেই এবার বিজেপিকে নির্মূল করার পথ শুরু করেছে তারা, এটা ইতিবাচক লক্ষণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমিতাভ তিওয়ারির বক্তব্য, বিজেপি যেমন গুজরাট মডেল দিয়ে গোটা দেশকে প্রলুব্ধ করেছিল, কংগ্রেসকেও তেমনই করতে হবে। এটা অন্য যেকোনও রাজ্যেও ঘটতে পারে, কিন্তু বিজেপির শিকড় গুজরাটের সঙ্গে জড়িত। এই কারণে, গুজরাট থেকেই বিজেপিকে হারানোর লড়াই শুরু করতে পারে।
