আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজধানী দিল্লির জাঁধেওয়ালানে শনিবার একটি উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) সদর দপ্তরের আশপাশে দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের (এমসিডি) পরিচালিত এই অ্যান্টি-এনক্রোচমেন্ট ড্রাইভকে প্রথমে সাধারণ প্রশাসনিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হলেও, একটি ভাইরাল ভিডিও পরিস্থিতিকে দ্রুতই জটিল ও বিতর্কিত করে তোলে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দাবি করা হয় যে আরএসএস ভবনের পাশে পার্কিং স্পেস তৈরি করতে একটি প্রাচীন মন্দির ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল— “আরএসএস-এর কোটি টাকার ভবন আছে, কিন্তু তাদের পার্কিং দরকার বলে ১,৫০০ বছরের পুরনো মন্দির ভেঙে দেওয়া হচ্ছে এবং ঐ জমি তাদের দখলে দেওয়া হবে।”
ভিডিওতে আরও দাবি করা হয় যে ‘১৫,০০০ বছর পুরনো গোরক্ষনাথ মন্দির’—যেখানে নাকি বহু বছর ধরে অবিরাম রামকথা পাঠ চলে—সেটিকেও ভাঙার চেষ্টা চলছে। ভিডিওতে কান্নায় ভেঙে পড়া বহু স্থানীয় বাসিন্দাকে দেখা যায়, যারা প্রশ্ন তুলছেন—“কেন ধর্মীয় স্থাপনা স্পর্শ করা হলো?” এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিরক্তি প্রকাশ করছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসন সময়মতো যথেষ্ট নোটিশ দেয়নি এবং হঠাৎ করেই উচ্ছেদ অভিযানের নাম করে বহু বছরের বসতি, দোকান ও ধর্মীয় স্থাপনা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকজন মহিলা স্থানীয় বাসিন্দাকে দেখা যায় বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়ে অভিযান থামানোর চেষ্টা করতে। তাদের অভিযোগ—“এখানে বহু প্রজন্ম ধরে মানুষ বসবাস করছে, অথচ পুনর্বাসনের কোনও স্পষ্ট নিশ্চয়তা নেই।”
এমসিডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উচ্ছেদ করা কাঠামোগুলিকে অন্তত ৪৫ দিন আগে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল এবং অধিকাংশ বাসিন্দা ইতিমধ্যেই জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষের দাবি, এলাকাটি ‘বিপজ্জনক এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় এবং নির্দেশ না মানার কারণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। আরও জানা গেছে, দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (ডিডিএ) সঙ্গে সমন্বয় করেই এই অভিযান চালানো হয়।
অভিযানের সময় কোনও অশান্তি এড়াতে দিল্লি পুলিশ বিপুল সংখ্যায় মোতায়েন ছিল। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ এটিকে ‘ঐতিহ্য ধ্বংস’ বলছেন, আবার কেউ দাবি করছেন এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভুল প্রচার।
তবে এখনও পর্যন্ত এমসিডির পক্ষ থেকে ভিডিওতে উত্থাপিত অভিযোগ—বিশেষত মন্দির ভাঙা সংক্রান্ত বিতর্ক—নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। ফলে পরিস্থিতি আরও জল্পনা ও উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।
উচ্ছেদ অভিযান আপাতত সম্পন্ন হলেও এলাকায় উত্তেজনা এখনও বজায় রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি—পরিষ্কার ব্যাখ্যা, বিকল্প ব্যবস্থা এবং ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। ঘটনার রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া আগামী দিনে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
