আজকাল ওয়েবডেস্ক: আবার র‍্যাগিং এর শিকার পড়ুয়া৷ তেলেঙ্গানার রাজাপেটায় একটি সরকারি আবাসিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে এই ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ, দ্বাদশ শ্রেণির  প্রায় ২০ জন ছাত্র মিলে দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে লাঠি আর ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে নৃশংসভাবে মেরেছে। গুরুতর আঘাত নিয়ে ওই ছাত্রকে এখন হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছিল গত শনিবার গভীর রাতে। স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রথমে ব্যাপারটা চেপে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মারধরের ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই পুরো বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। নির্যাতিত ওই ছাত্রটি পঞ্চম শ্রেণি থেকেই এই রাজাপেটার স্কুলে পড়ছে। তাকে মারা হয়েছে, কারণ সে স্কুলের 'ভাইস-ক্যাপ্টেন'-এর মতো একটা বড় দায়িত্বে ছিল। খবর অনুযায়ী, জুনিয়র হয়েও এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় সিনিয়র ছাত্ররা সেটা ‘হজম করতে পারেনি’।

জানা গিয়েছে, প্রায় ২০ জন সিনিয়র ছাত্রের একটি দল ব্যাট ও লাঠি হাতে ওই ছাত্রের ঘরে ঢুকে যায়। প্রথমে গালাগালি, তারপর বেধড়ক মারধর শুরু করে। তাদের এক বন্ধু মোবাইলে মারের দৃশ্য তোলার চেষ্টা করলে, হামলাকারীরা সঙ্গে সঙ্গে ঘরের আলো নিভিয়ে দেয়। এরপর অন্ধকারেই ইচ্ছেমতো পিটিয়ে চলে।

'বন্ধুকে' বাঁচাতে গিয়ে দশম শ্রেণির আরও পাঁচ জন ছাত্র মার খায়। তাদের মধ্যে দু'জন খুব জোরে আঘাত পাওয়ায় তাদের ভুবনগিরির হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা স্কুলের নিজস্ব ডিসপেনসারিতে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়েছে। মঙ্গলবার যখন ছাত্রের বাবা-মা, লাভন্যা ও সুদর্শন, সমাজমাধ্যমে মারধরের ভিডিও দেখেন, তখনই তাঁরা দ্রুত স্কুলে ছুটে আসেন।

তাঁরা ও তাঁদের আত্মীয়-স্বজনরা স্কুলের অধ্যক্ষ সুধাকর ও অন্যান্য শিক্ষকদের সামনে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ কেন এমন হামলা আটকাতে পারল না এবং কেনই বা চার দিন ধরে ঘটনাটি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হল! ছাত্রের মা লাভন্যা তাঁর ছেলের পিঠ ও বুকে আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, "ওরা আমার একমাত্র ছেলেকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল।"

খবর অনুযায়ী, পরিবার স্কুলের সামনে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে প্রতিবাদ জানায়। তারা দাবি করে, অধ্যক্ষ, শিক্ষক এবং হামলার সঙ্গে যুক্ত সব ছাত্রের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। বাবা-মা আরও অভিযোগ করেন যে স্কুলের শিক্ষকরা ঠিকমতো নজরদারি করেন না, আর সেই সুযোগে অনেক ছাত্র গুটখা, মদ ও সিগারেটের মতো খারাপ জিনিস ব্যবহার করছে। তাঁরা ছেলেকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে ইতিমধ্যেই ট্রান্সফার সার্টিফিকেট চেয়েছেন।

নির্যাতিত ছাত্র নিজেই জানিয়েছে যে ভাইস-ক্যাপ্টেন হিসাবে সে দায়িত্ব পালন করত বলেই সিনিয়ররা তাকে টার্গেট করেছিল। তার পরিবার হামলার সঙ্গে যুক্ত ২০ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে পুলিশে এফআইআর করার দাবি জানিয়েছে। এই অভিযোগ ও বিক্ষোভের মুখে অধ্যক্ষ সুধাকর তাঁদের গাফিলতি মেনে নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, গত দু’দিন ধরে স্কুলে বিশেষ মিটিং ও কাউন্সেলিং করা হয়েছে। অধ্যক্ষ ঘোষণা করেন, হামলাকারী ইন্টারমিডিয়েট ও দশম শ্রেণির সাত জন ছাত্রকে স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

তিনি আরও আশ্বাস দেন যে আগামী ৪ ডিসেম্বর সব অভিভাবককে ডেকে আলোচনা হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে, তার জন্য কঠোর নিয়ম চালু করা হবে। কিন্তু, স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রথমে ব্যাপারটা গোপন করার চেষ্টা করেছিল। পাশাপাশি, স্কুলে মোবাইল ফোন ব্যবহার, ছাত্রদের অবাধে বাইরে ঘোরাফেরা এবং অস্ত্র ব্যবহার করে 'গ্যাংয়ের কায়দায়' হামলা- এই ধরনের গুরুতর 'শৃঙ্খলার অভাবের' কথা সামনে আসায় স্কুল কর্তৃপক্ষের কড়া সমালোচনা শুরু হয়েছে।