আজকাল ওয়েবডেস্ক: সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট বা সিএএ–র মাধ্যমে আবেদন করলেই ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে না, মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণে এমনটাই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি সূর্য  কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ জানায়, প্রতিটি আবেদনকারীর দাবি ও নথি সঠিকভাবে যাচাই করার পরেই নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে  সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এমনটাই জানা যাচ্ছে দ্যা ওয়্যার-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে।

সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ ঘোষণা করেছে  স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘আত্মদীপ’-এর দায়ের করা একটি আবেদনের শুনানি চলাকালীন। সংগঠনের  পক্ষ থেকে আইনজীবী অনীশ রায় জানান, প্রতিবেশী তিন দেশ, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে পালিয়ে ভারতে আসা সংখ্যালঘুরা দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছেন। কিন্তু নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট না পাওয়ার ফলে এবং ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের (SIR) ফলে তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার আশঙ্কায় এইসব মানুষ ‘রাষ্ট্রহীন’ হয়ে পড়ার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

দ্যা ওয়্যার-এর প্রতিবেদন অনুসারে, আবেদনের শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনারা দাবি করছেন যে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধিত নীতির ভিত্তিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার আপনারা অর্জন করেছেন। কিন্তু শুধুমাত্রই নাগরিকত্ব দিতে হবে, এই দাবি করার মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে নাগরিকত্ব দাবি করার সময় প্রত্যেক ব্যক্তিকে উপযুক্ত প্রমাণ দিতে হবে তিনি কোন দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং কোন ধর্ম তার, কতদিন সেই দেশে বসবাস করেছেন এবং কোন পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এগুলো সবই প্রশাসনকে যাচাই করতে হবে।”

প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ আরও জানায়, সিএএ নিপীড়নের শিকার হওয়া ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু কার্যকরী অধিকার তৈরি করেছে ঠিকই, কিন্তু সেই অধিকার প্রয়োগের আগে প্রতিটি মামলাকে আলাদা আলাদা করে খতিয়ে দেখতে হবে। আবেদনকারীর বক্তব্য ও নথি পরীক্ষা করে এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের যে, নির্দিষ্ট ব্যক্তি সত্যিই আইন অনুযায়ী নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য কি না।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'আত্মদীপ'-এর পিটিশনে দাবি করা হয়, বহু আবেদনকারী এখনও পর্যন্ত নাগরিকত্বের কোনও সার্টিফিকেট পাননি। আবেদন করার পর আবেদন গ্রহণের যে স্লিপ দেওয়া হয়, সেটাও নথি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না চলতি এসআইআর–এ। এর ফলে ভোটার তালিকা তৈরি করার  সময় হাজার হাজার মানুষের নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবেদনকারীরা এটিকে ‘সাংবিধানিক সংকট’ বলে দাবি করেছেন।

সিএএ কতটা কার্যকর করা হবে সেই প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, “সরকার যদি আইন প্রণয়ন করে থাকে, তাহলে সেই আইনের বাস্তবায়নের উপযুক্ত পদ্ধতিও থাকতে হবে। আর কেউ যদি যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে স্বাভাবিকভাবে (naturalised) ভারতের নাগরিকত্ব পান, তাহলে তিনি আইন অনুযায়ী ভোটার তালিকায় নিজের নাম তোলার জন্য আবেদন করতে পারবেন।”

প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তর বেঞ্চ পুরো বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানানোর নির্দেশ দেয় এবং বলে, নাগরিকত্ব সংক্রান্ত প্রতিটি আবেদন দ্রুত ও সঠিকভাবে মীমাংসার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২০১৯ সালে নতুন নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পর থেকেই এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন অংশে বিতর্ক ও আন্দোলন চলেছে। আইনটি মূলত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও পারসি ধর্মাবলম্বীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সহজ করার একটি আইন, এমনটাই দাবি কেন্দ্রের। কিন্তু সেটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জটিলতা এবং আবেদনকারী সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্বের  ভবিষ্যৎ টানাপোড়েন নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ সেই বিতর্ককেই নতুন করে উসকে দিয়েছে। কার্যত শীর্ষ আদালত নাগরিকত্ব বিষয়ে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে দিল এই পর্যবেক্ষণে, এমনটাই জানা যাচ্ছে দ্যা হিন্দুর একটি প্রতিবেদন সূত্রে।