আজকাল ওয়েবডেস্ক: কানপুরের শ্যামনগরে ভয়াবহ ঘটনা। কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে পথকুকুরের হামলায় গুরুতর জখম হলেন ২১ বছরের এক ছাত্রী। গালে এবং নাকে গভীর ক্ষত নিয়ে এখন তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এমনটাই জানা গিয়েছে স্থানীয় সূত্রে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২০ আগস্ট। জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রী যে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরেন সেখানে তখন এলাকায় কুকুর ও হনুমানের মধ্যে লড়াই চলছিল। সেই সময় আচমকাই তিনটি পথকুকুর ওই কলেজপড়ুয়া বৈষ্ণবী সাহুকে অতর্কিতে আক্রমণ করে বসে। জানা গিয়েছে, বৈষ্ণবী অ্যালেন হাউস রুমা কলেজের ফাইনাল ইয়ারের বি-বি-এ ছাত্রী। কুকুরগুলি তাঁকে মাটিতে ফেলে দেয় ও মুখ ও শরীরে একাধিকবার কামড়ায়। বৈষ্ণবীর ডান গাল ছিঁড়ে দু’ভাগ হয়ে যায়, নাকেও মারাত্মক ক্ষত তৈরি হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে ছুটে পালালেও কুকুরগুলি ফের তাঁকে তাড়া করে রাস্তায় ফেলে দেয়।
স্থানীয়রা চিৎকার শুনে লাঠি নিয়ে ছুটে গিয়ে কুকুরগুলিকে তাড়ান। তবে ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। কামড় খেয়ে রক্তে ভেসে যাচ্ছিলেন বৈষ্ণবী। পরে পরিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাঁকে কানশিরাম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাঁর গাল ও নাকে ১৭টি সেলাই করে দেন। তাঁর কাকা অশুতোষ জানিয়েছেন, ‘বৈষ্ণবী কলেজ থেকে ফেরার পথে এই ভয়াবহ ঘটনায় পড়েছে’। পরিবার জানিয়েছে, বর্তমানে গালের চোটের জন্য মেয়েটি খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে না। তাঁদের কথায়, ‘বৈষ্ণবী মুখ নাড়াতে পারছেন না। কোনও রকমে স্ট্র দিয়ে তরল খাবার দেওয়া হচ্ছে’। পথ কুকুরদের নিয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ দাবি করেছেন তাঁরা। পরিবার জানিয়েছে, ‘সরকারকে কিছু করতে হবে। হয় এই কুকুরগুলিকে ধরে নিয়ে যাক বা আশ্রয়কেন্দ্রে রাখুক। কিন্তু রাস্তা থেকে সরাতে হবে। যেন আর কারও মেয়ের সঙ্গে এরকম না হয়’।
এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পথকুকুরদের আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর বিষয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক চলছে। উল্লেখ্য, গত ১১ আগস্ট পথকুকুরদের নিয়ে দেশের শীর্ষ আদালত যে রায় দিয়েছিল, দেশজুড়ে প্রবল আলোচনা-সমালোচনা হয় তার। দেশের কোনায় কোনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন মানুষ। নজর ছিল ২২ আগস্টের শুনানির দিকে। ২২ আগস্ট শীর্ষ আদালত ১১ আগস্টের রায় স্থগিত করেছে। বদল করা হয়েছে নির্দেশাবলীতে। কী জানা গেল পথকুকুর মামলা প্রসঙ্গে? প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১১ আগস্টের নির্দেশাবলীতে বদল করেছে শীর্ষ আদালত। আগের রায়ে বলা হয়েছিল, দিল্লি এনসিআর এলাকায়, পথকুকুর আর রাস্তায় থাকতে পারবে না। তাদের সরিয়ে নেওয়া হবে অন্যত্র। তারপর থেকে দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ, পশুপ্রেমীরা।
শুক্রবার শীর্ষ আদালত ওই রায়ের পরিবর্তন করেছে। এদিন জোর দেওয়া হয়েছে পথকুকুরদের জীবাণুমুক্ত করার এবং টিকা দেওয়ার বিষয়ে। শুক্রবার আদালত জানায়, পথকুকুরদের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে জীবাণুকরণ প্রতিষেধক এবং বন্ধ্যাত্বকরণ টিকা দেওয়ার পর, আবার যে জায়গার কুকুর, সেই এলাকাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে। ব্যতিক্রম হিসেবে, হালমা চালাতে পারে, অর্থাৎ হিংস্র কিংবা জলাতঙ্ক ঘটাতে পারে, এমন কুকুরদের ছাড়া যাবে না বলেও জানানো হয়েছে বলে খবর সূত্রের। একই সঙ্গে সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, প্রকাশ্য রাস্তায় আর পথকুকুরদের খাওয়ানো যাবে না। পথকুকুরদের খাওয়ানোর জন্য আলাদা, নির্দিষ্ট জায়গা তৈরি করতে হবে।
