আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক সময় বাড়ির পুরুষ সদস্যরাই ঠিক করতেন ছুটিতে কোথায় যাওয়া হবে। কিন্তু সেই দিন বদলেছে। এখন বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে চালকের আসনে বসছেন মহিলারাই। বুকিং.কম-এর বার্ষিক রিপোর্ট 'হাউ ইন্ডিয়া ট্র্যাভেলস ২০২৫' বলছে, ৭৩ শতাংশ ভারতীয় মনে করেন, বেড়ানোর পরিকল্পনায় আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন মহিলারা।
সমীক্ষা অনুযায়ী, মহিলারা এখন বাড়ির 'সফরের স্থপতি' হয়ে উঠছেন। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জন মহিলা জানিয়েছেন, তাঁরা আগের থেকে অনেক বেশি করে বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এক-তৃতীয়াংশ (৩৩ শতাংশ) মহিলা প্রায়শই পরিবার বা বন্ধুদের জন্য বেড়ানোর পরিকল্পনা থেকে শুরু করে হোটেল-টিকিট বুকিংয়ের নেতৃত্ব দেন। আরও ১৬ শতাংশ জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ভ্রমণের পরিকল্পনা তাঁরাই করেন। ২৬ থেকে ৫৫ বছর বয়সি এই 'সফরের স্থপতি'-রা শুধু নিজেরাই ঘুরতে ভালোবাসেন না, বরং অন্যদের জন্যও নিখুঁত ভাবে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সাজিয়ে তোলেন। তাঁদের এই পছন্দ-অপছন্দই এখন পর্যটন সংস্থা, হোটেল এবং বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রকে মহিলা পর্যটকদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
কী খোঁজেন মহিলা পর্যটকেরা? সমীক্ষায় কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট:
১) মহিলা-বান্ধব এবং স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার মতো পরিবেশ।
২) স্বাস্থ্য ও সুস্থতার সুযোগ-সুবিধা, যা তাঁদের মানসিক ভাবে তরতাজা হতে সাহায্য করবে।
৩) যাচাই করা হোটেল বা হোম-স্টে, বুকিং বাতিলের ব্যবস্থা এবং অ্যাপের মাধ্যমে বুকিংয়ের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ।
মহিলাদের এই ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ আসলে এক বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত। অবসর কাটানো হোক বা আত্ম-আবিষ্কার, সুস্থতার খোঁজ বা বিশেষ কোনও দিন উদযাপন- সব ক্ষেত্রেই ভারতীয় মহিলারা এখন ভ্রমণের সামনের সারিতে।
এই ধারাকে আরও শক্তিশালী করছে মহিলাদের দলবদ্ধ ভ্রমণ। আর এক্ষেত্রে বয়সের কোনও বেড়াজাল নেই। ‘দ্য হোস্টেলার’-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রণব ডাঙ্গি বলেন, "মহিলাদের দলবদ্ধ ভ্রমণ বাড়ছে। গোয়ায় ব্যাচেলরেট পার্টি এখন বিশাল বাজার। আবার বারাণসীতে বয়স্ক মহিলারা তীর্থ করতে দল বেঁধে ঘুরতে যাচ্ছেন।"
শুধু দলেই নয়, মহিলারা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি একা ঘুরতেও বেরোচ্ছেন। দিল্লিতে ‘দ্য হোস্টেলার’-এর ক্ষেত্রে একা ভ্রমণকারীদের প্রায় ৭০ শতাংশই মহিলা।
মনে রাখা দরকার, একা ঘোরার জন্য অবিবাহিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। মনোবিদদের মতে, যাঁরা বিবাহিত বা পরিবারের সঙ্গে থাকেন, তাঁদের জন্যও একা ভ্রমণ অত্যন্ত জরুরি। একা ঘুরতে গেলে মানুষ নিজের পছন্দ-অপছন্দ, জীবনের লক্ষ্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি নতুন করে আবিষ্কার করতে পারে। এটি ব্যক্তিগত বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা এবং আত্মনির্ভরতার অনুভূতি জাগায়।
একা ভ্রমণ আসলে স্বাধীনতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক, যা মহিলাদের ক্ষমতায়নের অনুভূতি দেয়। এমনকী দাম্পত্য জীবনেও এটি পারস্পরিক বিশ্বাস এবং বন্ধনকে আরও মজবুত করতে পারে। থেরাপিস্ট রুচি রুহ এর আগে আজকাল ডট ইন-কে বলেছিলেন, "একা ভ্রমণ সঙ্গীকে একে অপরের স্বাধীনতার প্রয়োজনকে সম্মান করতে শেখায়, যা সম্পর্কের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করে।"
যে সব মহিলাদের সন্তান রয়েছে, তাঁদের জন্য একা ভ্রমণ আত্ম-যত্নের এক শক্তিশালী উদাহরণ হতে পারে। যে অভিভাবকেরা নিজেদের জন্য সময় বের করেন, তাঁরা আরও তরতাজা হয়ে ফিরে আসেন এবং পরিবারের দায়িত্ব আরও ভালোভাবে সামলাতে পারেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে, বাড়িতে সাহায্যের ব্যবস্থা করে, কাছাকাছি ছোট ছোট ভ্রমণ দিয়ে শুরু করাই যায়। তারপর ধীরে ধীরে লম্বা সফরের পরিকল্পনা করা যেতে পারে।
ভারতের পর্যটন মানচিত্রে মহিলাদের এই অগ্রণী ভূমিকা এমন এক বাজার তৈরি করেছে, যাকে পর্যটন শিল্প আর উপেক্ষা করতে পারে না। এবিষয়ে প্রণব ডাঙ্গি যোগ করেন, "ডিজাইন, নিরাপত্তা এবং রিভিউ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখনও শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা তৈরি করিনি, তবে এটি একটি বিশাল সুযোগ।"
