আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি কর্ণাটকের উপকূলবর্তী পর্যটন শহর গোকার্ণায় দুই কন্যা সন্তানের সঙ্গে একটি গুহার ভেতরে থাকার পর সবাইকে হতবাক করে দেন এক রাশিয়ান যুবতী৷ খবর অনুযায়ী এই রাশিয়ান যুবতীর নাম নিনা কুটিনা। যুবতী দাবি করেছেন যে গোয়ার একটি গুহায় থাকার সময় তিনি এক শিশু সন্তানের জন্ম দেন। যুবতী এও জানান তাঁদের বাবা একজন ইসরায়েলি ব্যবসায়ী।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ওই গুহায় বসবাস করছিলেন তিনি। তাঁর ৬ বছর বয়সী মেয়ে প্রেমা ও ৪ বছরের অ্যামাকে নিয়ে। খবর অনুযায়ী, ৯ জুলাই বিকেল ৫ টার দিকে রুটিন টহলের সময় পুলিশকর্মীরা পাহাড়ের উপরে এক গুহার কাছে একটি অদ্ভুত দেখতে ঘর দেখতে পায়। এরপরই তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্দেশে উদ্ধার অভিযান শুরু করে।

পুলিশ জানিয়েছে, পাহাড়টি ভূমিধসপ্রবণ এলাকা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সেখানে একটি বড় ধরনের ধসও হয়। এলাকায় বিষধর সাপ সহ বিভিন্ন ধরণের বিপজ্জনক বন্যপ্রাণী রয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলেই ধরা হয়। সূত্রে আরও জানা যায়, ওই গুহায় বসবাস করার সময় নিনা ও তাঁর সন্তানদের কাছে খাবার, পানীয় জল কিংবা চিকিৎসাসংক্রান্ত কোনও নিরাপদ ব্যবস্থা ছিল না। গুহাটির চারপাশ ঘন জঙ্গল এবং পাথরে ঘেরা ছিল। ফলে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

খবর সূত্রে যুবতী ভারতে আসেন বিজনেস ভিসায়। কুটিনা পুলিশকে জানান, তাঁর ভিসা ও পাসপোর্ট গুহায় হারিয়ে গিয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার পর গোকার্ণা থানার পুলিশ এবং বন দপ্তরের সদস্যরা যৌথভাবে একটি অনুসন্ধান অভিযান চালায়৷ শেষমেশ তাঁর পাসপোর্ট ও ভিসা যাচাই করে দেখা যায়, তিনি ভারতে প্রথম আসেন একটি ব্যবসায়িক ভিসায়। ভিসার মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল। এরপর ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল গোয়ার পানাজিতে অবস্থিত ফরেন রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (FRRO) তাঁর নামে একটি এক্সিট পারমিট জারি করে। এরপর তিনি নেপাল যান। ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আবার ভারত প্রবেশ করেন। খবর অনুযায়ী, এরপর থেকে তিনি ভারতে অবৈধভাবেই অবস্থান করছেন। 

আরও পড়ুনঃ ' আমি আমার মেয়ের শেষকৃত্য করতে চাই ' ২২ বছর আগে নিখোঁজ মেয়ের মা দাবি করেন, ঘটনা ঘিরে রহস্য

এখানেই থেমে নেই। পুলিশ যুবতীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যুবতী জানান, তাঁরা গুহায় খারাপ নেই। বরং শহুরে ভিড়ের তুলনায় অনেক ভালো আছেন৷ তিনি এ'কথাও বলেন যে তাঁর সন্তানদের তিনি গুহায় 'মরতে' নিয়ে আসেননি। তাঁরা গুহার ভেতর 'মরে যাবেন না'। প্রকৃতির মাঝে থাকার অভ্যেস আছে তাঁদের। গুহায় তিনি সন্তানদের নিয়ে খুশি আছেন বলেই জানান। 

প্রথমে তিনি সন্তানদের বাবার সম্বন্ধে কথা বলতে রাজি ছিলেন না। পরে নিনা কাউন্সেলরদের সাহায্যে সমস্তটা মৌখিকভাবে জানান। তিনি প্রকাশ করেন তাঁর সঙ্গী একজন ইসরায়েলি নাগরিক। নিনার মতো তাঁর বয়সও ৪০ এর কোঠায়। তাঁরা কয়েক বছর আগে দেখা করেন এবং একে অপরের প্রেমে পড়েন৷ 

বর্তমানে নিনা ও তাঁর সন্তানদের রাশিয়ায় ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রায় এক মাস সময় লাগবে বলে জানা গিয়েছে। সূত্র মারফত গোকার্ণা বসবাসকারী তাঁর দুই মেয়ে ছাড়াও, নিনার রাশিয়ায় আরেকটি সন্তান রয়েছে। 

'আমাদের বৈধ ভিসা নেই। এটি শেষ হয়ে গেছে। ২০১৭ সালের পর আমরা ইতিমধ্যে চারটি দেশে ছিলাম, এবং তারপর ফিরে এসেছি,' নিনা পুলিশকে জানান৷