আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির ঘটনার রেশ কাটেনি এখনও। তার মাঝেই, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি মধ্যপ্রদেশে।
সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, ক্লাসে মারধোর, হেনস্থার কথা লিখে আত্মঘাতী কিশোরী। জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের ওই পড়ুয়া গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তদন্তে নেমে, পুলিশ পড়ুয়ার খাতা থেকে সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে বলে তথ্য সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে।
ঘটনা প্রসঙ্গে শুক্রবার (২১ নভেম্বর, ২০২৫) পুলিশ জানিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের রেওয়া জেলার একটি বেসরকারি স্কুলের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে তার বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ওই ছাত্রী একটি চিরকুট রেখে গেছে, যেখানে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে ওই পড়ুয়া।
ঘটনা প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ১৬ নভেম্বর, সেমারিয়ায় তার বাড়িতেই ১৭ বছর বয়সী ওই ছাত্রীকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তদন্তের সময়, বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর, ২০২৫) পুলিশ তার নোটবুকে একটি হাতে লেখা চিরকুট খুঁজে পায়, তেমনটাই জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরতি সিং।
এর আগেই সামনে এসেছে দিল্লির সেন্ট কলম্বাস স্কুলের ঘটনা। ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রের আত্মহত্যার ঘটনায় মানসিক হয়রানির অভিযোগে স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা-সহ চারজন শিক্ষাকর্মীকে সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে, শুক্রবারের তথ্য তেমনটাই। ঘটনার তদন্তে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরই এই পদক্ষেপ করল স্কুল কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তদের নাম মৃতের বাবার দায়ের করা এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঠিক কী ঘটেছিল?
১৬ বছরের ওই ছাত্র অভিযোগ করেছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে কয়েকজন শিক্ষক তাঁকে মানসিকভাবে হয়রানি করছিলেন। বুধবার বিকেলে রাজেন্দ্র প্লেস মেট্রো স্টেশনে সে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেয়। দ্রুত তাকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের অভিযোগ, বারবার স্কুলকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ছাত্রের মানসিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল, তা সত্ত্বেও শিক্ষকরা তাঁর সঙ্গে কঠোর আচরণই চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
বৃহস্পতিবার দিল্লির শিক্ষা দপ্তর জানায়, ঘটনার তদন্তে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুরো ঘটনার আগের আচরণ, অভিযোগের সত্যতা এবং স্কুল প্রশাসনের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে।
পরিবারের ক্ষোভ
ছাত্রের বাবা প্রদীপ পাটিল সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে খুশি নন। তাঁর দাবি, "এটা তো শুধু সাময়িক। এফআইআর-এ যাদের নাম আছে, তাদের তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার করা উচিত। যাতে আর কোনও শিক্ষক কোনও শিশুর সঙ্গে এমন আচরণ না করেন।" তিনি জানান, ছেলে একটি সুইসাইড নোট রেখে গেছে, যেখানে কয়েকজন শিক্ষক ও প্রিন্সিপালের নাম উল্লেখ করা আছে। সেখানে মানসিক হয়রানির অভিযোগের পাশাপাশি পরিবারকে ক্ষমা চাওয়া এবং অঙ্গদানের ইচ্ছার কথাও লেখা রয়েছে।
সুইসাইড নোটে কী ছিল?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাত্র তাঁর নোটে তিনজন শিক্ষক এবং স্কুল প্রিন্সিপালের নাম লিখেছে। পুরো বছর ধরেই তাঁদের কাছ থেকে সে মানসিক চাপ ও অপমানের শিকার হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। মা ও ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছে এবং অঙ্গদানের ইচ্ছে প্রকাশ করেছে।
‘স্কুল বদলানোর’ পরিকল্পনাও ছিল
পরিবার জানিয়েছে, ছেলের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁরা ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাকে অন্য স্কুলে ভর্তি করানোর। তবে চলতি পরীক্ষার দশ দিন শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। বাবার কথায়, "আমরা ওকে বুঝিয়েছিলাম, আর মাত্র দশ দিন। তারপরই ওকে অন্য স্কুলে নিয়ে যাব। ও রাজিও হয়েছিল।"
কিন্তু ঘটনার মাত্র তিনদিন আগে শিক্ষকরা নাকি তাকে ও পরিবারকে জানিয়েছেন, ছেলেকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করার পরিকল্পনা চলেছে। এতে সে ভীষণভাবে ভেঙে পড়ে।
