আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের চা বাগানগুলোতে এমন কিছু অত্যন্ত বিরল পাতা উৎপাদিত হয় যা প্রতিদিনের পানের জন্য নয়, কারণ ভারতের সেরা কিছু চা বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত উচ্চ দামে বিক্রি হয়। মূলত গুণমান এবং সীমিত প্রাপ্যতার জন্য দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত চা বাগান থেকে শুরু করে অসমের সমৃদ্ধ এস্টেট পর্যন্ত, এই বিরল চাগুলো চা প্রেমীদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।
এই চাগুলো অল্প পরিমাণে তৈরি হয়, অত্যন্ত উচ্চ দামে বিক্রি হয়। এই ধরনের চা সাধারণত সেইসব চা প্রেমীরা কেনেন যারা মূলত চায়ের স্বাদকে মূল্য দেন। তাদের কাছে চা মানে শুধু শক্তি অর্জন করা নয়, বরং এর স্বাদ, উৎস এবং প্রতিটি পাতার পেছনের গল্পও গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক চা দিবস উপলক্ষে, এখানে ভারতের তৈরি ছয়'টি সবচেয়ে দামি চা এবং সেগুলোকে কী কারণে এত ব্যয়বহুল, তা তুলে ধরা হল।
ভারতের তৈরি ছয়'টি সবচেয়ে দামি চা:
১. মনোহরি গোল্ড (অসম): মনোহরি গোল্ড আসামের একটি বিখ্যাত চা, যা এর উজ্জ্বল সোনালী ডগার জন্য পরিচিত। এটি খুব অল্প পরিমাণে হাতে তোলা হয়। এটি অত্যন্ত বিরল। এই চা গুয়াহাটির নিলামে রেকর্ড ভেঙেছে এবং ভারতের সবচেয়ে দামি চাগুলির মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হয়।
২০২২ সালের নিলামে মনোহরি গোল্ড চা পাতার দাম প্রতি কেজিতে ছিল ১.১৫ লক্ষ টাকা। যা বর্তমানে আরও বেশি।
২. দার্জিলিং ফার্স্ট ফ্লাশ (প্রিমিয়াম এস্টেট): ফার্স্ট ফ্লাশ দার্জিলিং চা বসন্তকালে তোলা হয়। এই চা পাতা হালকা, ফুলের মতো স্বাদ এবং সতেজ সুগন্ধের জন্য সমাদৃত। যেহেতু এই চা পাতা খুবই অল্প সময়ের জন্য পাওয়া যায় এবং নির্দিষ্ট এস্টেট থেকে আসে, তাই দার্জিলিং ফার্স্ট ফ্লাশ চা পাতা বিশ্বজুড়ে চা সংগ্রাহকদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।
প্রিমিয়াম এস্টেটের চায়ের জন্য প্রতি ১০০ গ্রাম ৮০০ টাকা থেকে ৮,০০০ টাকা।
৩. সিলভার টিপস ইম্পেরিয়াল (মাকাইবাড়ি, দার্জিলিং): সিলভার টিপস ইম্পেরিয়াল মাকাইবাড়ি এস্টেটের একটি অত্যন্ত মূল্যবান চা। এটি শুধুমাত্র পূর্ণিমার রাতে এবং খুব সীমিত পরিমাণে সংগ্রহ করা হয়। বিশেষ সংগ্রহের পদ্ধতি এবং স্বল্প উৎপাদন এটিকে চা বিশেষজ্ঞ এবং সংগ্রাহকদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে। এই চায়ের ৫০ গ্রামের জন্য ১,৯৫০ টাকা।
৪. গোল্ডেন নিডল (উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাগান): গোল্ডেন নিডল চা শুধুমাত্র বিশেষ ঋতুতে তৈরি হয়। শুধুমাত্র সোনালী ডগা-সহ সেরা কুঁড়িগুলোই নির্বাচন করা হয়, যার ফলে উৎপাদন খুব কম হয়। এই দুর্লভতার কারণে, এই চা খুব উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি প্রায় ৪০,০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
৫. মাকাইবাড়ি ভিন্টেজ এবং এস্টেট স্পেশাল চা (দার্জিলিং): মাকাইবাড়ির বিশেষ এবং ভিন্টেজ চা বায়োডাইনামিক চাষ পদ্ধতি, পুরানো চায়ের ঝোপ এবং সীমিত উৎপাদনের জন্য পরিচিত। ক্রেতারা শুধুমাত্র স্বাদের জন্য নয়, এই চাগুলোর ইতিহাস এবং উৎপত্তিস্থলের জন্যও অতিরিক্ত মূল্য দিতে ইচ্ছুক থাকেন। উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে, প্রায়শই প্রতি ১০০ গ্রামের জন্য কয়েক হাজার টাকা।
৬. অসম অর্থোডক্স গোল্ডেন টিপস এবং নীলগিরি ফ্রস্ট টি: অসমের অর্থোডক্স গোল্ডেন-টিপ চা তাদের সমৃদ্ধ স্বাদ এবং কারিগরী প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বিখ্যাত এবং এগুলো নিলামে খুব উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়েছে। নীলগিরি ফ্রস্ট চা ঠান্ডা আবহাওয়ার পরে তোলা হয়, যা এগুলোকে দুর্লভ করে তুলেছে।
অসমের গোল্ডেন-টিপ চা প্রতি কেজি ৭০,০০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে; নীলগিরি ফ্রস্ট চা সাধারণত প্রতি ১০০ গ্রামের জন্য প্রায় ৫২০ টাকা থেকে শুরু হয়।
