আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহার বিধানসভা নির্বাচনে একটিও আসন জিততে না পারা এবং অধিকাংশ প্রার্থী জামানত হারানোর পর নিজেদের পুরো সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল প্রাশান্ত কিশোরের নেতৃত্বাধীন জন সুরাজ পার্টি। শনিবার পাটনায় দলের জাতীয় কাউন্সিলের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বৈঠকে রাজ্য সভাপতি মনোজ ভরতির সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন দলের মুখ্য কৌশলবিদ প্রাশান্ত কিশোরসহ বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ— ভারতের সেনাবাহিনীর প্রাক্তন  উপ-প্রধান এস. কে. সিং, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আর.পি. সিং এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও দলের উপদেষ্টা ওয়াই. ভি. গিরি।

এক মাসের মধ্যে নতুন সংগঠন গঠন

দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী দেড় মাসের মধ্যে পঞ্চায়েত থেকে জেলা এবং রাজ্য— সব স্তরেই নতুন সংগঠন গড়ে তোলা হবে। বর্তমান পুরো কাঠামো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দল বলেছে, “একটি কার্যকর ও সক্রিয় সংগঠন গঠনের লক্ষ্যে এই ব্যাপক পুনর্গঠন জরুরি।”

১২টি প্রশাসনিক বিভাগে দায়িত্ব ভাগ

দলের মুখপাত্র সৈয়দ মাসিহ উদ্দিন জানান, সিনিয়র নেতাদের বিহারের ১২টি প্রশাসনিক বিভাগে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। তারা প্রত্যেকে নিজেদের নির্ধারিত এলাকায় ভ্রমণ করবেন এবং জেলা কমিটি, কর্মী ও সমন্বয়কারীদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা করবেন। এর মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে নতুন নেটওয়ার্ক পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, “এই পুনর্গঠনের মাধ্যমে দলকে আরও শক্তিশালী, সক্রিয় ও নির্বাচনীভাবে সক্ষম করে তুলতেই আমাদের লক্ষ্য।”

পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণে তদন্ত দল

দল জানিয়েছে, নির্বাচনী ভরাডুবির কারণ খুঁজে বের করতে সিনিয়র নেতারা পৃথক রিপোর্ট প্রস্তুত করবেন। এতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হবে—

সংগঠনের কাঠামোগত দুর্বলতা

অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাভঙ্গ

কর্মী-নেতাদের মধ্যে ‘‘অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসঘাতকতা’’

প্রচার কৌশলের ঘাটতি

প্রার্থী নির্বাচনের ত্রুটি


রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব্যর্থতার পরেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড জারি রাখার বার্তা

ভরাডুবির পরেও জন সুরাজ পার্টি জানিয়েছে, তাদের রাজনৈতিক প্রচার ও জনসংযোগ পর্ব চালিয়ে যাবে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, এই পুনর্গঠন ভবিষ্যতের নির্বাচনী লড়াইয়ের জন্য দলকে নতুন করে প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে। পার্টির তরফে বলা হয়েছে, “আমরা এই বিপর্যয়কে সুযোগে পরিণত করব। নবগঠিত সংগঠনই আগামী দিনে রাজনৈতিক বিকল্প হিসেবে জন সুরাজকে প্রতিষ্ঠা করবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রাশান্ত কিশোরের বহুদিনের প্রস্তুতি সত্ত্বেও জন সুরাজ বিহারে প্রত্যাশিত সাড়া তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। এবার এই পুনর্গঠন দলকে নতুন দিশায় নিয়ে যেতে পারে, তবে তা কতটা কার্যকর হবে, সেটাই আগামী মাসগুলিতে স্পষ্ট হবে। বিহারে জন সুরাজ পার্টির এই বৃহৎ সাংগঠনিক ঝড় শুধু নির্বাচনী ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়া নয়— এটি প্রাশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও বিহারের বিকল্প রাজনীতির পথনির্দেশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।