আজকাল ওয়েবডেস্ক: কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বিহারে নতুন রাজনৈতিক দল জন সুরজ পার্টির প্রধান প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সোমবার সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে, গত সপ্তাহে দুই নেতার মধ্যে সনিয়া গান্ধীর বাসভবন ১০, জনপথে বৈঠক হয়। বিহার নির্বাচনে বিজেপি এবং তার সহযোগী জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)-এক কাছে কংগ্রেস এবং জন সুরজের শোচনীয় বারের পরেই এই সাক্ষাৎ। তবে, দুই পক্ষই বৈঠক নিয়ে কোনও শব্দ খরচ করতে রাজি হয়নি।

বৈঠকটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রিয়ঙ্কা বলেন, “আমি কার সঙ্গে দেখা করি বা না করি, তা নিয়ে কারও কোনও আগ্রহ নেই।” অন্যদিকে, পিকে কংগ্রেস নেত্রীর সঙ্গে কোনও বৈঠকের কথা সরাসরি অস্বীকার করেছেন। এনডিটিভি তাদের সূত্রকে উদ্ধৃত করে নিজেদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে, দু’পক্ষের বিহার নির্বাচনে খারাপ পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

পিকে এবং কংগ্রেস অতীতে একসঙ্গে কাজ করেছে। ২০১৭ সালে পিকে তৎকালীন কংগ্রেস নেতা অমরিন্দর সিংকে পাঞ্জাবে বিজেপি-আকালি দলের বিরুদ্ধে জয় এনে দিয়েছিলেন। তবে সেই বছরই উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস-সমাজবাদী পার্টি পরাজিত হয়েছিল। কংগ্রেসের রাজ্য ইউনিটের কেউ কেউ নির্বাচনী প্রচার পরিকল্পনার সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিলেন। পিকে পরে কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে ‘খারাপ’ বলে বর্ণনা করেন এবং দলটির সাংগঠনিক সংস্কৃতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন। 

এর চার বছর পর উত্তরপ্রদেশের পরবর্তী নির্বাচন কয়েক মাস আগে পিকে-র কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার প্রায় নিশ্চিত ছিল। সনিয়া গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা এবং রাহুলের সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন। কিন্তু সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। এনডিটিভির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রিয়ঙ্কা সেই সময় কংগ্রেসের নির্বাচনী কৌশল ঢেলে সাজাতে পিকে-কে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু, রাহুল এবং অন্যান্য নেতারা সেই সিদ্ধান্তে বাধ সাধেন।

পিকে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি নিয়ে যে কয়েকটি ‘সত্যি কথা’ বলেছিলেন, তা কোনও কাজে আসেনি। উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালের অক্টোবরে তিনি বলেছিলেন যে বিজেপি আগামী বহু বছর ধরে ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে থাকবে এবং যুক্তি দিয়েছিলেন, ‘একবার ৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে গেলে... সহজে সরানো যাবে না’। 

২০২২ সালের এপ্রিলে তিনি সেই অধ্যায়ের ইতি টানেন এবং কংগ্রেসকে স্পষ্টভাবে ‘না’ বলে দেন। কারণ কংগ্রেস পিকে-কে জানিয়েছিল যে তাঁর শর্ত অনুযায়ী ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য তারা প্রস্তুত নয়। তিনি তখন বলেছিলেন, “আমার মতে, আমার চেয়েও দলের প্রয়োজন নেতৃত্ব এবং সম্মিলিত ইচ্ছা। যার মাধ্যমে সংস্কারের মাধ্যমে কাঠামোগত সমস্যাগুলো সমাধান করা যাবে।”

কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের পরেই জন সুরজের জন্ম হয়। নতুন দলটি বিহারে রাজনীতির এক নতুন যুগের সূচনা করার জন্য গঠিত হয়েছিল। নভেম্বরে পিকে এনডিটিভিকে বলেছিলেন যে, তাঁর দল প্রকৃতপক্ষে বিহারের মতো একটি অনুন্নত রাজ্যে রাজনৈতিক আলোচনাকে জাতিভেদ প্রথা থেকে কর্মসংস্থানের দিকে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

বিহারের ফল যদিও পিকে-র পক্ষে যায়নি। কংগ্রেস ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০২০ সালের অসাধারণ পারফরম্যান্সের ধারা বজায় রাখবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। সূত্র মতে, একটা পরাজয় পিকে এবং কংগ্রেসকে একসঙ্গে কাজ করতে বাধ্য করছে। বিশেষ করে ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু এবং অসমের নির্বাচন এর পরেই ২০২৭ সালে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন। এই দুই নির্বাচনে তাদের সম্পর্ক যাচাই করে দেখতে চায় দুই দলই। তাদের আসল লক্ষ্য ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচন। ওই বছর চতুর্থ বার ক্ষমতায় আসার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বিজেপি।