আজকাল ওয়েবডেস্ক: এখনও রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা শেষ হতে একদিন বাকি থাকতেই দেশের অধিকাংশ বড় ওয়াক্ফ বোর্ড মাত্র সামান্য অংশের সম্পত্তির তথ্য উমীদ (UMEED) পোর্টালে আপলোড করতে পেরেছে। কেন্দ্র সরকার এই পোর্টালটি চালু করেছিল চলতি বছরের ৬ জুন, এবং ৬ ডিসেম্বর শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে কার্যত গত কয়েক মাস ধরে পোর্টালের ধীরগতি, বারবার ক্র্যাশ হওয়া এবং নথি সংগ্রহের জটিলতার কারণে বেশিরভাগ রাজ্য সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। ইতিমধ্যে বিরোধী সংসদ সদস্যরা সংসদে বিষয়টি তুলে ধরেছেন এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরণ রিজিজুকে ছয় মাস সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
ওয়াক্ফ (সংশোধিত) আইন অনুযায়ী ৩বি ধারা স্পষ্ট করে যে, দেশের সমস্ত ওয়াক্ফ সম্পত্তির ডিজিটাল নথিভুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক। সরকার দাবি করছে—এই কেন্দ্রীয় ডিজিটাল ভান্ডার ও জিও-ট্যাগিং পদ্ধতি সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, নজরদারি ও সুরক্ষা বাড়াবে। দেশের প্রায় ৮.৭ লাখ ওয়াক্ফ সম্পত্তির পরিমাণ আনুমানিক ৯.৪ লাখ একর, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১.২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি।
তবে বাস্তবে পোর্টালে তথ্য প্রবেশের কাজ বারবার বাধার মুখে পড়ছে। Alt News–এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবের গতকাল এক্স-এ জানান, বহু ব্যবহারকারী পোর্টালে লগ-ইন করতে পারছেন না, ওটিপি পাচ্ছেন না, এবং যাঁরা লগ-ইন করতে পারছেন তাঁদের ডেটা আপলোড করতে গিয়ে বারবার ত্রুটি দেখা দিচ্ছে।
রাজ্য অনুযায়ী অগ্রগতির হিসেব থেকে দেখা যাচ্ছে—উত্তর প্রদেশে সবচেয়ে বেশি, মোট ১.৪ লাখ ওয়াক্ফ সম্পত্তি রয়েছে, তারপর পশ্চিমবঙ্গ (৮০,৪৮০), পাঞ্জাব (৭৫,৫১১), তামিলনাড়ু (৬৬,০৯২) এবং কর্ণাটক (৬৫,২৪২)। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী—বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উত্তর প্রদেশে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ, পশ্চিমবঙ্গে সোমবার রাত পর্যন্ত মাত্র ১২ শতাংশ, আর কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুতে গত সপ্তাহে ছিল যথাক্রমে ১০ শতাংশের মতো।
এই তালিকায় পাঞ্জাব ব্যতিক্রম। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ সম্পদ নথিভুক্ত হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, পাঞ্জাব ওয়াক্ফ বোর্ড আলাদা আলাদা সম্পত্তি না করে "ওয়াক্ফ এস্টেট" হিসেবে রেজিস্ট্রি করে থাকে, ফলে রেকর্ড আপলোড তুলনামূলক সহজ হয়েছে।
এদিকে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরণ রিজিজু মঙ্গলবার সংসদে বলেন, ৫ ডিসেম্বরই শেষ তারিখ থাকছে। তবে আজ তিনি ঘোষণা করেছেন যে আগামী তিন মাস কোনও জরিমানা বা কঠোর ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হবে না। তিনি বলেন—"যাঁরা তথ্য আপলোডের চেষ্টা করেছেন কিন্তু শেষ করতে পারেননি, তাঁদের আরেকটি সুযোগ দেওয়া হবে। তিন মাসের এই সময়ে সমস্ত মুতাওয়াল্লিদের সম্পত্তির নথিভুক্তিকরণ সম্পন্ন করা উচিত।"
এর আগে সুপ্রিম কোর্টও রেজিস্ট্রেশনের সময় বাড়ানোর আবেদন খারিজ করে জানিয়েছিল, সময় বাড়ানোর ব্যবস্থা আইনেই উল্লেখ আছে, এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলি ওয়াক্ফ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারে।
এদিকে পর্যাপ্ত সময় না পাওয়া, পোর্টাল চালু হওয়ার দেরি এবং কার্যকরী নিয়ম ও স্পষ্ট নির্দেশিকা দেরিতে প্রকাশ হওয়ার কারণে কার্যত রেজিস্ট্রেশন-সময় প্রায় তিন মাসেই সীমাবদ্ধ হয়েছে বলে দাবি করছেন বিরোধী দল ও ওয়াক্ফ প্রতিনিধিরা। কংগ্রেস সাংসদ নাসির হুসেন জানান, পোর্টালে বারবার লগ-ইন ব্যর্থ হওয়া, তথ্য আপলোড হারিয়ে যাওয়া, পেজ লোড হতে দীর্ঘ সময় লাগা—এসব কারণে বেশিরভাগ মুতাওয়াল্লি কাজ এগোতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ ওয়াক্ফ সম্পত্তি গ্রামীণ অঞ্চলে এবং বেশিরভাগ মুতাওয়াল্লি বয়স্ক ও ডিজিটালি অভ্যস্ত নন। তাছাড়া শতাব্দী-প্রাচীন দানপত্র, মানচিত্র, প্রাচীন গেজেট নথি বহু ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত বা অস্পষ্ট, অথচ পোর্টালে বাধ্যতামূলক ক্ষেত্রগুলো অত্যন্ত নির্দিষ্ট।
এদিকে কংগ্রেস এমপি মোহাম্মদ জওয়েদ সতর্ক করে বলেছেন, পোর্টাল সঠিকভাবে কাজ না করায় হাজার হাজার মসজিদ, দরগাহ, কবরস্থান ও মাদ্রাসা ডি-রেকগনিশনের ঝুঁকিতে রয়েছে। গতকাল তিনি লোকসভায় এই বিষয়ে স্থগিতাদেশ প্রস্তাবও দেন।
সংসদ চত্বরে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কংগ্রেস নেতা ইমরান প্রতাপগড়ী বলেন—“এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ সম্পত্তির তথ্য আপলোড হয়েছে। সার্ভার বারবার ক্র্যাশ করছে। এভাবে ডিজিটাল রেকর্ড করা সম্ভব নয়। তাই সময়সীমা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই।”
সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মুতাওয়াল্লি এবং বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে উদ্বেগ বাড়ছে—কারণ প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা এবং তাড়াহুড়োর প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি ও ঐতিহ্যগত অধিকার ঝুঁকির সামনে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হচ্ছে।
