আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, যা এতদিন সাউথ ব্লকে ছিল, আগামী মাসে স্থানান্তরিত হতে চলেছে নতুন ভবন এক্সিকিউটিভ এনক্লেভে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের অংশ হিসেবে তৈরি এই এক্সিকিউটিভ এনক্লেভে থাকবে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের পাশাপাশি মন্ত্রিসভার সচিবালয়, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয় এবং আধুনিক কনফারেন্সিং সুবিধা। নতুন দফতর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের কাছেই অবস্থিত। জানা যাচ্ছে, পুরনো দপ্তর ভবনে জায়গার অভাব ও আধুনিক পরিকাঠামোর অনুপস্থিতিই ছিল নতুন ভবন তৈরির প্রধান কারণ। মনে করা হচ্ছে, উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে ভারতের ভাবমূর্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে প্রশাসনিক দপ্তরগুলিকে নতুন আধুনিক ভবনে স্থানান্তর করা জরুরি।

এর আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও কর্মী মন্ত্রক স্থানান্তরিত হয়েছে কর্তব্য ভবন-৩-এ, যার উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী ভাষণে তিনি জানান, স্বাধীনতার এত বছর পরও ভারতের প্রশাসনিক কাজকর্ম চলছিল ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত এই ভবনগুলি থেকে। এখানে যথাযথ আলো, বাতাস ও পরিকাঠামোর অভাব ছিল। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকও প্রায় এক শতাব্দী ধরে একটি ছোট ভবন থেকে কাজ চালিয়ে গিয়েছে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, নতুন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেরও নতুন নামকরণ হতে পারে। সেন্ট্রাল ভিস্তার অন্যান্য প্রকল্পের মতোই, এর নামকরণ করা হতে পারে ‘সেবা’-র চেতনাকে সামনে রেখে।

আরও পড়ুন: ২২ আগস্ট রাজ্যে একাধিক মেট্রো রুটের উদ্বোধন করবেন মোদি, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানালেন অশ্বিনী বৈষ্ণব

প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, ‘PMO হবে মানুষের অফিস, মানুষের দপ্তর। মোদির PMO নয়।’ প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হওয়ার পর, দীর্ঘ আট দশক ধরে ভারতের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত নর্থ ব্লক ও সাউথ ব্লক রূপান্তরিত হবে একটি জাদুঘরে যার নাম দেওয়া হবে ‘যুগে যুগীন ভারত সংগ্রহালয়’। এর জন্য জাতীয় জাদুঘর ও ফ্রান্স মিউজিয়ামস ডেভেলপমেন্টের মধ্যে চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো ভারতের চিরন্তন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করা। যাতে অতীতের গৌরব, বর্তমানের আলো এবং ভবিষ্যতের কল্পনা একসঙ্গে ফুটে ওঠে।

উল্লেখ্য, দিল্লিতে একাধিক নতুন পর্যটন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। যমুনা নদীর তীরে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ছট ঘাট, অত্যাধুনিক রিভার ক্রুজ পরিষেবা এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলিকে একসঙ্গে যুক্ত করতে একটি ‘হেরিটেজ সার্কিট’ গড়ে তোলা হবে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত বলেন, ‘দিল্লির সমৃদ্ধ ইতিহাস, আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য ও আধুনিক আকাঙ্ক্ষা একে অনন্য করে তুলেছে। এই পর্যটন প্রকল্পগুলি শুধু অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে না, বরং প্রতিটি দর্শনার্থীর কাছে রাজধানীর সঙ্গে গভীর, প্রাণবন্ত সংযোগ স্থাপন করবে’। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সার্কিটের মাধ্যমে দিল্লির দুর্গ, স্মৃতিস্তম্ভ, জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলি এক রুটে যুক্ত হবে, ফলে পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ আরও সহজ হবে এবং শহরে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে উৎসাহিত করবে। যমুনা নদীতে আধুনিক ক্রুজ পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সেখানে যাত্রীরা নদীর তীরবর্তী সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উপভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া নদীর তীরে নিয়মিত সন্ধ্যা আরতির আয়োজন করা হবে, যা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী নদী পূজার ধাঁচে হবে। প্রস্তাবিত ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ছট্‌ ঘাটটি হবে দেশের অন্যতম বৃহৎ নদীতীরবর্তী আধ্যাত্মিক সমাবেশস্থল, যা বিশেষত ছট্‌ পূজা এবং অন্যান্য উৎসবে লক্ষাধিক ভক্তকে আকর্ষণ করবে। পর্যটন প্রকল্পগুলি ধাপে ধাপে চালু হবে বলে জানানো হয়েছে। দিল্লির জন্য নিজের বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গির কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা বলেন, ‘ছোট হলেও দৃঢ় পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা গড়ে তুলব এক স্বাধীন, উন্নত দিল্লি—যে শহরকে বিশ্ব শ্রদ্ধার চোখে দেখবে এবং যা আমাদের দেশের সম্ভাবনার গর্বিত প্রতীক হয়ে উঠবে’।