আজকাল ওয়েবডেস্ক: বেঙ্গালুরুর অতুল সুভাষের পর এবার আগরার মানব শর্মা। আবারও আত্মঘাতী হলেন এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী! অভিযোগেও রয়েছে সাদৃস্য। নিজের অত্মহননের জন্য স্ত্রীকে দায়ী করেছেন মানব। মৃত্যুর আগে নিজের অভিযোগের কথা ভিডিও পোস্ট করে জানিয়ে গিয়েছেন তিনি। স্ত্রীর বিবাহবর্হিভূত সম্পর্কের দাবি করেছেন তথ্য প্রযুরক্তি কর্মী মানব। প্রশাসনের কাছে আবেদন, 'পুরুষদের কথাও ভাবুন'। পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস-এর কর্মী মানব শর্মাকে নিজের বাড়িতেই ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

তবে, আত্মঘাতী মানব শর্মার স্ত্রীর দাবি, তারঁ স্বামী মানব শর্মা মাদকাসক্ত ছিলেন। অতীতেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। পরিবার সব জানত, যদিও কাজের কাজ হয়নি।  ছেলে আত্মঘাতী হওয়ার পরই পুত্রবধূর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মানবের বাবা। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি।

প্রায় সাত মিনিটের একটি মর্মান্তিক ভিডিও রেকর্ড খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। যেখানে মানব শর্মাকে মৃত্যুর আগে বলতে সোনা যাচ্ছে যে, "এটি প্রশাসনের জন্য। আইনিভাবে পুরুষদের রক্ষা করা দরকার, না হলে এমন সময়ও আসবে- যখন দোষ দেওয়ার মতো কোনও পুরুষ থাকবে না। আমার স্ত্রী অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িত ছিল। এরপরে আমি কী করতে পারি? এটা আর কোন ব্যাপার না।" দেখা যাচ্ছে সেই ভিডিও-তে মানব কিছুক্ষণ থেমে গিয়ে বলেন, "আমার মৃত্যুতে কোনও সমস্যা নেই। আমি যেতে চাই। দয়া করে পুরুষদের কথা ভাবুন। আমি দুঃখিত, সবাই। দয়া করে, পুরুষদের কথা বলা উচিত। তারা খুব একা হয়ে যায়। আমি চলে গেলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমি আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি।"

এই ভিডিও ক্লিপটি প্রকাশের কিছুক্ষণ পরে, টিসিএস-এর তথ্য প্রযুক্তিকর্মী আত্মঘাতী মানবের স্ত্রী নিকিতা একটি পাল্টা ভিডিও তৈরি করেন। যেখানে তিনি মানবের তোলা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং স্বামী তাঁকে মারধর চালাতো বলে অভিযোগ করেছেন। নিকিতা বলেন, "যেদিন মানব আত্মহত্যা করে মারা যায়, সেদিন সে আমাকে আমার মামার বাড়িতে ফেলে এসেছিল। সে আমার সম্পর্কে যা দাবি করেছে, সেটা আমার অতীত সম্পর্ক। আমাদের বিয়ের পরের কোনও কিছুর সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। সে আগেও একাধিকবার নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। আমি তাঁকে কমপক্ষে তিনবার বাঁচিয়েছি। সে মদ্যপান করত এবং আমাকেও মারধর করত।"

মানবের স্ত্রীর কথায়, "স্বামীর মদ্যপান, আত্মহত্যার চেষ্টার কথা আমি শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে অনেক বার জানিয়েছি। ওঁরা আমল দেননি।"  মানবের বোনকে তাঁর অবস্থার কথা জানিয়ে হোয়াট্‌সঅ্যাপ করেছিলেন তিনি। সেই হোয়াট্‌সঅ্যাপ চ্যাটও পুলিশকে দেখিয়েছেন নিকিতা। চ্যাটে নিজের ননদকে নিকিতা লিখেছিলেন, "দিদি কিছু করো, ও আত্মহত্যা করবে।" জবাবে তাঁর ননদ লেখেন, "ওকে ওর মতো ছেড়ে দাও। ঘুমিয়ে পড়ো।"

পুলিশের এক আধিকারিক বলেছেন, "ঘটনাটি ২৪শে ফেব্রুয়ারি ঘটেছিল। মানব শর্মার মৃতদেহ সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেদিন আমরা কোনও অভিযোগ পাইনি। তারপর মৃতের ফোনে ভিডিওটি পাওয়ার পর পরিবারের লোকেরা মামলা দায়ের করেন। তাঁর স্ত্রী স্বামীর তোলা সব অভিযোগগুলিকে মিথ্যা বলে অভিহিত করেছেন। আমরা তদন্ত চালাচ্ছি।"

গত কয়েকমাসে এমন একাধিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। মানবের মৃত্যুর বিষয়টির সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বেঙ্গালুরুতে প্রযুক্তিবিদ অতুল সুভাষের আত্মহত্যার ঘটনার সঙ্গে মিল রয়েছে। একটি বেসরকারি সংস্থার ৩৪ বছর বয়সী ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, গত ডিসেম্বরে আত্মহত্যা করে মারা যান। তিনি ২৪ পৃষ্ঠার একটি সুইসাইড নোট রেখে যান, যেখানে তিনি তাঁর স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের উপর হয়রানির অভিযোগ তোলেন।