আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওড়িশা পুলিশের সাব ইনস্পেকটর (এসআই) পদে নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, ৩০০টি পদে নিয়োগের জন্য চাকরি বিক্রি করার চেষ্টা হয়েছিল। ওড়িশা পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড (ওপিআরবি)-এর নজরদারিতে পরিচালিত এই পরীক্ষায় কেলেঙ্কারিতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গভীরভাবে প্রোথিত দুর্নীতির বিষয়টি ফের একবার প্রকাশ্যে চলে এসেছে। 

ওড়িশা পুলিশের অপরাধদমন শাখা (ক্রাইম ব্রাঞ্চ)-র তদন্তে দেখা গিয়েছে, নকল অ্যাডমিট কার্ড তৈরি করে পরীক্ষার্থীদের একাংশের পরীক্ষার জায়গা বদলে দেওয়া হয়েছিল। তদন্তকারীদের একাংশকে উদ্ধৃত করে ওড়িশার সংবাদমাধ্যমগুলি জানিয়েছে, অবৈধ উপায়ে চাকরি পাওয়ার জন্য পরীক্ষার্থীরা টাকা দেওয়ার পরেই তাদের ভুয়ো অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হত। এমন জায়গায় তাদের পরীক্ষা ফেলা হত, যেখানে ওই পরীক্ষার্থীরা কারচুপির প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা পাবেন।

আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির দিকে জুতো ছোড়া: সামাজিক মাধ্যমে ‘অসংযত প্রতিক্রিয়া’ নিয়ে সতর্ক করল আদালত

সূত্রের খবর, পরীক্ষার্থীরা তাঁদের জন্য নির্ধারিত পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর জন্য বাস এবং ট্রেন করে যাতায়াত করছিলেন। বাসে করে ১১৪ জন পরীক্ষার্থী যাচ্ছিলেন। তাঁদের গ্রেপ্তা করেছে পুলিশ। আরও ১৮৬ জন পরীক্ষার্থী ট্রেনে করে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। তাঁরা সকলেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁদের খোঁজ চলছে। 

ক্রাইম ব্রাঞ্চের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র আর্থিক লাভের জন্য অন্যায্য উপায় অবলম্বন করে সমগ্র পরীক্ষা প্রক্রিয়াকে বিপর্যস্ত করার জন্য কাজ করছে।”

প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে যে, প্রার্থীদের আসল নথিপত্র দালালদের কাছে ছিল। দু’টি বেসরকারি সংস্থা সিলিকন এবং পঞ্চসফট এই দুর্নীতিতে জড়িত বলে সন্দেহ পুলিশের। উল্লেখযোগ্যভাবে, পঞ্চসফট অ্যাডমিক কার্ড তৈরির দায়িত্বে ছিল এবং পরীক্ষাকেন্দ্র নির্ধারণের কারচুপির কথা তারা জানত বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, প্রার্থীরা নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ প্রদান করার পর, তাদের আডমিট কার্ড সরবরাহ করা হত এবং সেই সকল পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হত যেখানে তাদের সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করা হত।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তারা ভিজিয়ানগরম থেকে গোপনীয় প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে, পরীক্ষার জন্য কিছু বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে ভুবনেশ্বরে ফিরে নিজ নিজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। প্রার্থীরা কিস্তিতে ২৫ লক্ষ টাকা করে দিতে রাজি হয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে ১০ লক্ষ টাকা এবং বাকি টাকা চাকরি নিশ্চিত হওয়ার পরে। পুলিশ ১১৪ জন প্রার্থী এবং তিনজন দালাল-সহ মোট ১১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

চাকরি দুর্নীতিতে শঙ্কর প্রুস্টি নামের এক ব্যক্তিকেই মূল অভিযুক্ত বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তিন পঞ্চসফটের প্রোমোটাক। কিন্তু গত ২৭ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তাঁর আর খোঁজ নেই। পুলিশ সূত্রে খবর, শঙ্কর নেপাল হয়ে দুবাই পালিয়ে গিয়েছেন। সেখান থেকেই ওড়িশা হাই কোর্টে আগাম জামিনের জন্য আবেদন করেছেন। সোমবার (১৩ অক্টোবর) ক্রাইম ব্রাঞ্চ প্রুস্টি এবং আরও কয়েকজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের জন্য একটি লুকআউট সার্কুলার জারি করেছে। 

গত, ১৭ জানুয়ারি ওপিআরবি বিভিন্ন বিভাগের অধীনে ৯৩৩টি সাব-ইন্সপেক্টর পদ পূরণের জন্য কম্বাইনড পুলিশ সার্ভিস পরীক্ষার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। দেড় লক্ষেরও বেশি প্রার্থী এই পরীক্ষায় বসার জন্য আবেদন করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষাটি ৮ এবং ৯ মার্চ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে তারিখ পরিবর্তন করে ৫ এবং ৬ অক্টোবর হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল।

এক লক্ষেরও বেশি প্রার্থী এখন অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। ওপিআরবি ঘোষণা করেছে যে তদন্ত শেষ হওয়ার পরে, নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা হবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্পন্ন করা হবে। ওপিআরবি-র দায়িত্বে থাকা সিনিয়র আইপিএস অফিসার এস কে নাথ মনে করেন, ওড়িশা সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়া বানচাল করার জন্য একটি ‘ইচ্ছাকৃত ষড়যন্ত্র’ করা হচ্ছে।

পরীক্ষার্থীরা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। এই কেলেঙ্কারিতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে, বিরোধী দল বিজু জনতা দল (বিজেডি) সিবিআই তদন্তের দাবিতে রাজ্যব্যাপী আন্দোলন শুরু করেছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস আদালতের তত্ত্বাবধানে তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

সিবিআই তদন্তের জন্য ওড়িশা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।