আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওড়িশার বালেশ্বরের ফকির মোহন বিশ্ববিদ্যালয়। আবারও যৌন নির্যাতনের অভিযোগের ভিত্তিতে খবরের শিরোনামে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এবার যৌন হেনস্থার শিকার হলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের স্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যেই তাঁদের কোয়ার্টার। সেই আবাসনের মধ্যে ঢুকেই অধ্যাপকের স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে এক যুবক।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার দুপুরে। পুলিশ জানিয়েছে, এক যুবক বাণিজ্যিক গ্যাস সিলিন্ডারের মিস্ত্রি পরিচয় দিয়ে অধ্যাপকের আবাসনে প্রবেশ করেছিল। দরজায় কলিং বেল বাজিয়েছিল সে। অধ্যাপকের স্ত্রী দরজা খুলতেই যুবক জানিয়েছিল, মাসে মাসে সে গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করে। সেই কারণেই এসেছে।
রান্নাঘরে যাওয়ার অজুহাতে ঘরে ঢুকেই দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেয় যুবক। এরপর যুবতীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। কোনও মতে ছিটকে পালিয়ে অন্য একটি ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে লুকিয়ে থাকেন অধ্যাপকের স্ত্রী। সেই ঘর থেকে স্বামীকে ফোন করে বিষয়টি জানান। পাশাপাশি চিৎকার করে প্রতিবেশীদের খবর ডাকেন।
অধ্যাপকের স্ত্রীর চিৎকার শুনেই আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীরা ছুটে আসেন। সেখানে পৌঁছেই অভিযুক্ত যুবককে আটকে করেন নিরাপত্তারক্ষীরা। এরপর পুলিশের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত যুবকের নাম, শঙ্কর পাত্র। বালেশ্বরের নীলগিরি এলাকার বাসিন্দা সে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ জুলাই ওড়িশার বালেশ্বরের ফকির মোহন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও এক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ফকির মোহন কলেজের বি.এড-এর ছাত্রী ছিলেন এক তরুণী। ওই কলেজের হেড অব দ্যা ডিপার্টমেন্ট সমীর কুমার সাহুর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। পয়লা জুলাই কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান তরুণী। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, সাতদিনের মধ্যে তদন্ত করে, উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু সাতদিন পার করেও কলেজ কর্তৃপক্ষ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেননি। বরং বিষয়টি নিয়ে কারও কোনও মাথা ব্যথা ছিল না। অবশেষে কলেজের মধ্যে প্রিন্সিপালের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান তরুণী ও তাঁর বন্ধুরা।
কলেজের গেটের সামনে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়ারা। দলে ছিলেন তরুণীও। হঠাৎ সকলের মাঝখান থেকে উঠে সোজা কলেজের করিডোরে চলে যান। সেখানে গিয়েই গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন। তাঁর শরীরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের লেলিহান শিখা দেখেই ছুটে আসেন সহপাঠীরা। তাঁরাও আগুন নেভাতে তোড়জোড় শুরু করেন। কয়েক মিনিট পর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। দুই দিন পরেই তরুণীর মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, তরুণীর দেহের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক ছিশ। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন আরও এক পড়ুয়া। তাঁর শরীরের ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। আহত পড়ুয়াদের এইমস ভুবনেশ্বরে ভর্তি করা হয়েছিল। ঘটনার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
এদিকে কলেজের প্রিন্সিপাল দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, গত সপ্তাহেই অভিযুক্ত অধ্যাপক সমীর কুমার এবং তরুণীকে মুখোমুখি বসিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। অভিযোগটি মিথ্যে বলেই দাবি করেছিলেন অধ্যাপক। তবে তরুণী নিজের দাবিতে অনড় ছিলেন। অধ্যাপকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না করা হলে, চরম পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন।
তরুণী জানিয়েছিলেন, হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট বারবার যৌন হেনস্থা করতেন তাঁকে। প্রায়ই সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার প্রস্তাব দিতেন। সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় কেরিয়ার শেষ করার হুমকি দিয়েছিলেন। অধ্যাপক এও জানিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে সঙ্গম না করলে, ফেল করিয়ে দেবেন। পরীক্ষায় ভাল লিখেও কোনও লাভ হবে না। বিষয়ে ফেল করলে ভবিষ্যতে কখনও কোনও চাকরিও পাবেন না তিনি।
