আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া রবিবার থেকেই দ্রুত গতিতে চলেছে। আগামী ১৯ বা ২০ নভেম্বর নতুন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতে পারে, যা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চূড়ান্ত সময়সূচির ওপর। ইতিমধ্যেই পাটনার গান্ধী ময়দানে প্রস্তুতি জোরকদমে চলছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদি ছাড়াও বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা উপস্থিত থাকতে পারেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে।
রবিবারই নির্বাচন কমিশন বিহারের ১৮তম বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল রাজ্যপাল রাজেন্দ্র আরলেকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দেবে। এরপর নতুন বিধানসভা গঠনের নোটিফিকেশন জারি করা হবে। এই নির্দেশই কার্যত মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট তুলে নেবে এবং সরকার গঠনের প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন। ওই বৈঠকে বিদায়ী ১৭তম বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর তিনি রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের হাতে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা।
নীতীশের পদত্যাগের পর এনডিএর শরিক দলগুলো পৃথকভাবে তাদের বিধায়ক দলের বৈঠক করবে, যেখানে জোটের নতুন নেতা নির্বাচিত হবেন। সেই নেতা রাজ্যপালের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাবি পেশ করে সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক অনুমতি চাইবেন। সবকিছু ঠিকঠাক চললে সপ্তাহের মধ্যেই নতুন মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা শপথ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পটভূমিতে এনডিএ ১৮তম বিধানসভায় পরিষ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। বিজেপি ৮৯টি আসন পেয়ে একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে। নীতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) ৮৫টি আসন পেয়েছে। শরিকদের মধ্যে এলজেপি (রামবিলাস) ১৯টি, হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (HAM–Secular) ৫টি এবং রাষ্ট্রীয় লোক মরচা ৪টি আসন দখল করেছে। মোট ২০২টি আসন পেয়ে এনডিএ শক্ত অবস্থান নিয়েছে। বিপরীতে, মহাগঠবন্ধন এককভাবে মাত্র ৩৫টি আসন পেয়েছে।
২০২৫ সালের এই রায় ২০২০ সালের তুলনায় একেবারে উল্টো ছবি তুলে ধরেছে। ২০২০ সালে মহাগঠবন্ধন ছিল এনডিএর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এবং বহু এলাকায় সমানে টক্কর দিয়েছিল। কিন্তু এবার বিরোধী জোট কার্যত ভেঙে পড়ে। আরজেডির ফলাফল আশানুরূপ হয়নি; দলের প্রত্যাশার তুলনায় আসন সংখ্যা অনেক কমেছে। অন্যদিকে কংগ্রেসের পরিস্থিতি আরও করুণ। মাত্র ৬টি আসনে জিতেছে তারা। তাদের ৮.৭১ শতাংশ ভোট শেয়ার ২০২০ সালের কাছাকাছি থাকলেও দুর্বল সাংগঠনিক শক্তি, প্রার্থীদের খারাপ নির্বাচন এবং নেতৃত্বের অনিশ্চয়তা আসনে রূপান্তর করতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রের বরাতে জানা গেছে যে নীতীশ কুমার আবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন কি না, সেটি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিজেপি ও জেডিইউর মধ্যে আলোচনা চলছে। একইসঙ্গে শপথগ্রহণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতি থাকায় অনুষ্ঠানকে আরও বৃহৎ আকারে আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। গান্ধী ময়দানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, স্থাপন করা হচ্ছে বিশাল মঞ্চ, অতিথিদের জন্য তৈরি হচ্ছে বিশেষ আসনব্যবস্থা।
সব মিলিয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বিহারে নতুন সরকারের আনুষ্ঠানিক সূচনা হতে চলেছে। ভোটের ফলাফলের প্রতিফলন ও রাজনৈতিক সমীকরণের ভিত্তিতে রাজ্যের আগামী পাঁচ বছরের দিক নির্ধারিত হবে।
