আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের রাজনীতিতে আবারও বিতর্কের ঝড় উঠেছে একটি এআই-জেনারেটেড ভিডিওকে কেন্দ্র করে। কংগ্রেস নেত্রী রাগিনী নায়ক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নীল কোট এবং কালো ট্রাউজার পরে একটি রেড-কার্পেট অনুষ্ঠানে চা বিক্রি করতে। ভিডিওতে পিছনে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দেশের পতাকা এবং ভারতের তিরঙ্গা দেখা যায়, আর একই সঙ্গে শোনা যায় এক কণ্ঠ—যা মোদির কণ্ঠস্বর নকল করে—বলছে, “চা বলো, চা নেও… কেউ চা চায়?”


এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিজেপি অভিযোগ তোলে যে কংগ্রেস ইচ্ছাকৃতভাবে প্রধানমন্ত্রীকে অপমান ও কটাক্ষ করার উদ্দেশ্যে এই ধরনের ভিডিও ব্যবহার করছে। বিজেপি মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “রেণুকা চৌধুরীর সংসদে আচরণ থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর প্রতি কটুক্তি—এসবের ধারাবাহিকতায় এখন রাগিনী নায়ক প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর ‘চাওয়ালা’ পটভূমি নিয়ে বিদ্রূপ করছেন।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “এলিট কংগ্রেস একটি পরিশ্রমী, ওবিসি সমাজের সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা একজন প্রধানমন্ত্রীর সাফল্য মেনে নিতে পারে না। এর আগেও তারা মোদির ‘চাওয়ালা’ পরিচয়কে বিদ্রূপ করেছে, ১৫০ বারের বেশি তাঁর বিরুদ্ধে কটুক্তি করেছে, এমনকি তাঁর মাকেও টার্গেট করেছে বিহারে—জনগণ এসব কখনও ক্ষমা করবে না।”


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই বহুবার প্রকাশ্যে বলেছেন যে শিশুকাল ও কৈশোরে তিনি গুজরাটের একটি রেলস্টেশনে চা বিক্রি করতেন। তাঁর এই অতীত বহুবার রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। তাই ভিডিওটি প্রকাশ পেতেই বিজেপি একে কংগ্রেসের ‘অভিজাত মানসিকতা’র উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছে।


উল্লেখযোগ্যভাবে, এটি প্রথমবার নয় যখন এআই-জেনারেটেড ভিডিও নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এর আগেও, ১০ সেপ্টেম্বর বিহার কংগ্রেস একটি ৩৬ সেকেন্ডের এআই-ভিডিও প্রকাশ করেছিল, যেখানে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর প্রয়াত মা হীরাবেনকে স্বপ্নে দেখছেন। ভিডিওতে তাঁর মা-কে দেখানো হয় মোদির বিহারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে। ভিডিওর নিচে ‘AI GENERATED’ লেখা থাকলেও তা দেশজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করে।


ভিডিওটি নিয়ে অভিযোগ দায়েরের পর পাটনা হাইকোর্ট বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে কংগ্রেসকে নির্দেশ দেয় যেন ভিডিওটি সব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে অবিলম্বে সরিয়ে ফেলা হয়। আদালত আরও মন্তব্য করে যে এআই-প্রযুক্তির ভুল ও বিভ্রান্তিকর ব্যবহারে জনমনে বিভ্রান্তি, রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বিভাজন বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকে।


একাধিক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের মতে, এআই-নির্মিত কনটেন্ট এখন রাজনীতিতে নতুন অস্ত্র হয়ে উঠছে—যেখানে বিদ্রূপ, প্রচার, পাল্টা প্রচার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের নির্বাচনী আবহে এআই-ভিডিওগুলি ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তির ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
শেষ পর্যন্ত, রাগিনী নায়কের পোস্ট করা ভিডিও কেবল একটি ব্যঙ্গাত্মক কনটেন্টই নয়, বরং এআই-নির্মিত ভিজ্যুয়াল রাজনীতিতে কীভাবে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, তার আরও একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের সংঘাতের কেন্দ্রে আবারও উঠে এসেছে– ডিজিটাল প্রচার, বিদ্রূপ, ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং প্রযুক্তির অপব্যবহারের বড় প্রশ্ন।