আজকাল ওয়েবডেস্ক: হিমাচল প্রদেশে প্রবল বর্ষণের ফলে জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হিমাচল প্রদেশ স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (HPSDMA) জানিয়েছে, রবিবার সকাল পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে ৩৬১টি সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে তিনটি জাতীয় সড়ক রয়েছে। একইসঙ্গে ৬৩৭টি ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার (DTR) এবং ১১৫টি জল সরবরাহ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ জুন থেকে শুরু হয়েছে এই দু্র্যোগ। বর্ষাকালীন এই দুর্যোগে এখনও পর্যন্ত ২৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ১৩৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন ভূমিধস, আকস্মিক বন্যা এবং বাড়ি ধসে পড়ার মতো বৃষ্টিজনিত ঘটনায়। বাকি ১২৫ জন নিহত হয়েছেন দুর্ঘটনাজনিত কারণে, যেগুলোর পেছনে ছিল পিচ্ছিল রাস্তা ও কম দৃশ্যমানতার মতো কারণ।

সূত্রে জানা গিয়েছে, মাণ্ডি জেলায় সবচেয়ে বেশি রাস্তা বন্ধ রয়েছে। মোট ২০১টি রাস্তা, যার মধ্যে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ততম এনএইচ-০৩ (NH-03) রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কুল্লু জেলা, যেখানে ভূমিধসের কারণে ৬৩টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই জেলায় এনএইচ-৩০৫ (NH-305)-এর খানাগ এলাকাতেও রাস্তা বন্ধ রয়েছে। কিন্নোর জেলা থেকেও এনএইচ-০৫ (NH-05)-এর টিনকু নাল্লা অংশে রাস্তা বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।

দুর্যোগের জেরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মাণ্ডি জেলায়। খবর পাওয়া গিয়েছে, সেখানে প্রায় ৪৪৮টি ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়েছে লাহৌল-স্পিতি জেলায়। সেখানে উচ্চ ভোল্টেজ লাইনের ত্রুটির কারণে ১১২টি ট্রান্সফর্মার কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কুল্লু ও মাণ্ডি জেলায় পানীয় জলের প্রকল্পগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের কারণে অনেক প্রকল্প ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে।

হিমাচল প্রদেশ স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (HPSDMA) জানিয়েছে, বর্তমানে পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুতগতিতে মেরামতের কাজ চলছে। তবে একটানা বৃষ্টিপাত এবং বারবার ভূমিধস হওয়ায় উদ্ধার ও পুনরুদ্ধার কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিতে অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত এড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। সামনে আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় রাজ্যজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ মেঘের দেশে যৌনতার সীমা ছাড়ালেন তরুণী! মায়ের ঘুম ভাঙতেই যা হল...

প্রসঙ্গত, সংবাদমাধ্যম সূত্রে, ২০ জুন থেকে ১৩ জুলাইয়ের মধ্যে, মোট ৯৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ৫৭ জন বৃষ্টিপাতজনিত ঘটনায় এবং ৪১ জন সড়ক দুর্ঘটনায়। আরও ১৭৮ জন আহত হয়েছেন। বর্ষায় ৩৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৩১টি আকস্মিক বন্যা, ২২টি ক্লাউডবার্স্ট এবং ১৮টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।

অন্যদিকে, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে সিরমৌর জেলার রাজগড়ে ৭২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। খাদ্রালা (৪২.৪ মিমি), পাছাদ (৩৮ মিমি), মান্ডি (২৬.৪ মিমি), ভুন্টার (২২ মিমি), শিলারু (১৪.২ মিমি), সেওবাগ (১২.২ মিমি), শিমলা (১১.৫ মিমি) এবং রোহরু (১০ মিমি)।

৩০ জুন থেকে ১ জুলাই রাতে মান্ডি জেলায় দশটি মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের ফলে ধ্বংসযজ্ঞের পর নিখোঁজ হন ২৭ জন। খুঁজে বের করার জন্য অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।