আজকাল ওয়েবডেস্ক: ব্রিজ তৈরি হচ্ছিল। নির্মীয়মান ওই ব্রিজের একাংশের মালপত্র যেখানে রাখা ছিল, সেখান থেকেই নাকি লোহার রড চুরি করে পালাচ্ছিলেন যুবক। সেই অভিযোগেই নির্মীয়মান সেতুর কয়েকজন শ্রমিক এবং ওই জায়গার নিরাপত্তারক্ষীরা লাঠি দিয়ে মারধোর শুরু করে যুবককে। হাসপাতালে কোনও রকমে পরে নিয়ে যাওয়া হলেও, শেষ রক্ষা হল না। অভিযোগ আর আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার উল্লাসে, গিয়েছে তরতাজা প্রাণ।

এই ঘটনায় ফের শিরোণামে ইন্দোর। সেখানকার আজাদ নগর এলাকায় ঘটে গিয়েছে ওই মর্মান্তিক, নারকীয় ঘটনা। একদল লোকের গণপিটুনিতে প্রাণ গিয়েছে ২৮ বছর বয়সের উমেন্দ্র সিং ঠাকুরের। ঘটনাটি ঘটে রবিবার রাতে। সেতুর নির্মীয়মান অংশের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, কয়েকজন মিলে উমেন্দ্র নামের ওই যুবককে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধোর করছে। আচমকা ওই যুবককে প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে এলাকার লোকজন। তৎক্ষণাৎ খবর দেওয়া হয় পুলিশে। খবর যায় পরিবারেও। যুবককে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় এমওয়াই হাসপাতালে। তবে শেষরক্ষা হয়নি। প্রাণ গিয়েছে তাঁর।

আরও পড়ুন: বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর সন্তান থাকবে কার কাছে? কোর্ট কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবে? নাবালকের অবস্থা দেখে যা বলল আদালত


সূত্রের খবর, ওই যুবকের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের অন্তত ৪০ জায়গায় হাড় ভেঙেছিল তাঁর। হাত, পা, পাঁজরের হাড় ভেঙেছিল মারের চোটে। শরীরের অভ্যন্তরীণ অংশে রক্তক্ষরণ হয় ব্যাপক হারে। দেহের একাধিক জায়গায় হাড় ভাঙ্গা ছাড়াও গভীর ক্ষতের দাগ পাওয়া গিয়েছে। ক্রমাগত আঘাতে ওই ক্ষতগুলি তৈরি হয়েছে বলে মতামত। 

সূত্রের খবর, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করেছে ইতিমধ্যে। পর তাদের হেফাজতে নিয়েছে। অভিযুক্তরা মারধরের কথা স্বীকার করেছে। পুলিশকে তারা জানিয়েছে, তারা উপেন্দ্রকে চুরি করার সময় ধরে ফেলে।  ওই যুবক লোহার রড চুরি করে পালাচ্ছিলেন বলে দাবি। হাতেনাতে ধরার পর, ওই জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং তার পরেই লাঠি দিয়ে মারধোর শুরু হয়। মারধরের চোটে প্রায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে যুবক। পরিস্থিতি বেগতিক দেখেই নারকীয় অত্যাচার থামায় তারা।  

ঘটনায় ভেঙে পড়েছে যুবকের পরিবার। কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না এই ঘটনা। উপেন্দ্রর ভাইপো গোলু ঠাকুর আজাদ নগর থানার বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি করে এবং অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি করে আজাদ নগর থানার সামনে উপেন্দ্রর দেহ নিয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁর পরিবারের সদস্যরা এবং স্থানীয়রা। উপেন্দ্রর ভাইপো বলেন, ‘আমার কাকা ছিলেন গোটা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। উপেন্দ্রর মৃত্যুতে গোটা পরিবারের কী হবে, কীভাবে চলবে, কান্নায় ভেঙে পড়ে সেই প্রশ্নও তোলেন। একইসঙ্গে জানান, তাঁর কাকা চুরি করতে পারেন না। উপেন্দ্রর সঙ্গে কারও পূর্ব-শত্রুতা ছিল না বলেও জানান তিনি।

গত ১৮ জুন কলকাতার কড়েয়া থানা এলাকায় এক যুবককে মোবাইল চোর সন্দেহে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। অভিযোগ, স্থানীয় চারজন প্রথমে ওই ব্যক্তিকে আটকে রাখে এবং তাঁর ওপরে নির্মম অত্যাচার চালানো হয়। জানা গিয়েছে, চোর সন্দেহে ওই যুবককে প্রথমে একটি ঘরে আটকে রাখা হয় এবং তারপর ওই ব্যক্তির ওপর পাশবিক অত্যাচার, মারধর এমনকি ড্রিল মেশিন দিয়ে পা ফুটো করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

 

জুন মাসের শুরুতেই বিহারে চকোলেট চুরির অভিযোগে পাঁচ বালকের উপর নারকীয় অত্যাচার চালানো হয়।