আজকাল ওয়েবডেস্ক: অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় জেলবন্দি ছিলেন সৌরভ রাজপুত হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত মুসকান। এবার সন্তান প্রসব করলেন। বুধবার এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন মুসকান। গত ২৪ নভেম্বর লালা রাজপত রাই মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন মুসকান। সদ্যোজাতর নাম রেখেছেন, রাধা। উল্লেখ্য, এদিনই মৃত সৌরভ রাজপুতের জন্মদিন।
হাসপাতালের গাইনোলজি বিভাগের চিকিৎসক ড. শাগুন জানিয়েছেন, বুধবারেই জেলে ফেরৎ যাবেন মুসকান। সন্তান প্রসবের পর তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। জেল সুপারিনটেনডেন্ট বীরেশ রাজ শর্মা জানিয়েছেন, জেরে মহিলাদের কক্ষেই মায়ের সঙ্গে থাকতে পারবে সদ্যোজাত। ছ'বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকতে পারবে সে। এই সময়ের মধ্যে জেলের তরফেই সদ্যোজাতর খাবার, পোশাক, চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হবে।
এদিকে মৃত সৌরভ রাজপুতের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, সদ্যোজাতর ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হবে। নবজাতক মৃত সৌরভ না খুনে অভিযুক্ত সাহিলের সন্তান, তা জানার জন্যেই ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। যদি সন্তানটি সৌরভের হয়, তবেই তাঁরা দায়িত্ব নেবেন। এমনকী মুসকানের বড় মেয়ের ডিএনএ পরীক্ষার জন্যেই আদালতে আবেদন জানাবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। দুই সন্তানের ডিএনএ সৌরভের সঙ্গে মিলে গেলে, দু'জনের দায়িত্ব বহন করবে পরিবার।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর মার্চ মাসে নীল ড্রামে দেহ লুকিয়ে রাখার ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল।। ২০১৬ সালে সৌরভ রাজপুত ও মুসকান রাস্তোগি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রেমের সম্পর্ক পরিণতি পাওয়ায় খুব খুশি ছিলেন দু'জনে। স্ত্রীর সঙ্গে আরও সময় কাটানোর জন্য মার্চেন্ট নেভির চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু পারিবারিক অশান্তির কারণে এরপর বাড়ি ছেড়ে মুসকানকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে থাকতে শুরু করেন সৌরভ। ২০১৯ সালে ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন মুসকান। কিন্তু সেই সুখের মুহূর্ত বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দিন কয়েক পরেই সৌরভ জানতে পারেন, তাঁর বন্ধু সাহিলের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত মুসকান।
সেই সম্পর্ক ঘিরে অশান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছয়। ডিভোর্সের পথে এগিয়েও, সন্তানের কথা ভেবে পিছিয়ে আসেন সৌরভ। ফের নেভির চাকরি নিয়ে ২০২৩ সালে ভিন দেশে চলে যান। মেয়ের ছ'বছরের জন্মদিন উপলক্ষে ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন সৌরভ। এর মাঝেই সাহিল ও মুসকান আরও গভীর প্রেমে ডুবে যান। সৌরভ দেশে ফেরার পরেই তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করেন।
৪ মার্চ খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সৌরভকে খাওয়ান। অচৈতন্য অবস্থায় সৌরভকে কুপিয়ে খুন করেন মুসকান ও সাহিল। এরপর মৃতদেহ ১৫ টুকরো করে, ড্রামের মধ্যে ভরে সিমেন্ট দিয়ে আটকে দেন। কিছুদিন পর প্রতিবেশীরা সৌরভের খোঁজখবর জিজ্ঞেস করতেই, দু'জনে বলেন, তিনি পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছেন।
খুনের বিষয়টি লুকিয়ে রাখতে এরপর সৌরভের ফোন নিয়ে মানালিতে বেড়াতে যান সাহিল ও মুসকান। সেখানে গিয়ে সৌরভের ফোন থেকে ছবি শেয়ার করেন। কিন্তু সৌরভের সঙ্গে দীর্ঘদিন ফোনে কথা না হওয়ায় থানায় অভিযোগ দায়ের করে পরিবার। তখনই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। স্ত্রী ও বন্ধুকে আটক করে জেরা শুরু করে তারা। পুলিশি জেরায় খুনের ঘটনাটি স্বীকার করে নেন তাঁরা। খুনের ১৪ দিন পর সেই ড্রাম থেকে দেহের টুকরোগুলো উদ্ধার করা হয়।
