আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজনৈতিক পরিস্থিতি টলোমলো। দেশের ভিতরেই হাজার অস্থিরতা। সেই পরিস্থিতিতেই সতর্ক করতে চেয়েচিল ভারতকে। ইস্যু হাসিনার আওয়ামী লিগ। বুধবার ইউনূস সরকার বার্তা দিতেই, পালটা জবাব দিল ভারত। সাফ জানাল, আওয়ামী লিগের বক্তব্য ভুল, মিথ্যা।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন বুধবার যুক্তি দিয়েছে, ভারতের শহরগুলিতে আওয়ামী লীগের অফিস খোলা হয়েছে। আর এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। কয়েকঘণ্টাতেই জবাব দিয়েছে ভারত। ভারত সরকার জানিয়েছে যে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যদের এদেশে কোনও বাংলাদেশ বিরোধী কার্যকলাপের বিষয়ে তারা অবগত ছিল না।
বুধবার ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানায়, 'ভারতে আওয়ামী লিগের সদস্যদের দ্বারা বাংলাদেশ বিরোধী কোনও কার্যকলাপ বা ভারতীয় আইনের পরিপন্থী কোনও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ভারত সরকার অবগত নয়। সরকার ভারতের মাটি থেকে অন্য দেশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনার অনুমতি দেয় না।বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেস বিবৃতি তাই ভুল।
আরও পড়ুন: ইজরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিই হয়নি? সব তছনছ করতে 'যে কোনও মুহূর্তে যুদ্ধ'-এর হুঁশিয়ারি ইরানের!
ভারত আশা করে, জনগণের ইচ্ছা এবং ম্যান্ডেট নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে।'
বুধবারের এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রক দাবি করে কলকাতায় এবং দিল্লিতে অফিস খুলেছে সে দেশে নিষিদ্ধ আওয়ামী লিগ। বিবৃতিতে লেখা হয়, 'এই ঘটনা ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার দ্বারা পরিচালিত সু-প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখার ঝুঁকিও তৈরি করবে এবং বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি রূপান্তরেও গুরুতর প্রভাব ফেলবে।'
ঠিক এক বছর আগে, হাসিনা গত আগস্টে বাংলাদেশ ছাড়ার পরেই রাতারাতি সোনার বাংলাদেশ পরিণত হয় সেনার বাংলাদেশে। তারপর থেকে অন্তবর্তী সরকার রাষ্ট্র চালাচ্ছে। ঝুড়ি ঝুড়ি অভিযোগের মাঝে ৫ আগস্ট, মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. মহম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানান, আগামী বছর রমজান মাস শুরুর আগেই ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি জাতীয় সংসদের নির্বাচন করতে চান। তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন, ‘২০২৬ সালের পবিত্র রমজানের আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব।’
এর আগে, 'ভোট কবে' এই প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি-সহ একাধিক রাজনৈতিক দল। প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ। নজর ছিল, হাসিনার বক্তব্যের দিকে। ১১ আগস্ট আওয়ামি লিগ বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে একটি লম্বা পোস্ট করা হয়েছে। তাতে জানানো হয়েছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বদলে, মুজিব কন্যা ২১ দফা পরিকল্পনা বাতলেছেন। বক্তব্যে মহম্মদ ইউনূসকে 'ফ্যাসিস্ট', অন্তবর্তী সরকারকে 'জনশত্রু' বলেও উল্লেখ করা হয়েছে পোস্টে।
Our response to media queries on the Press Statement issued by the Interim Government of Bangladesh⬇️
— Randhir Jaiswal (@MEAIndia)
???? https://t.co/XDLTjDUBuH pic.twitter.com/UvT2MgwN20Tweet by @MEAIndia
পরিকল্পনা স্পষ্ট আকারে উল্লেখের আগে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশ এখন এক ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাঙালি জাতি আজ উগ্র সাম্প্রদায়িক-সন্ত্রাসী শক্তি এবং বিদেশী এজেন্টদের ভয়াবহ তাণ্ডবে বিধ্বস্ত এবং বিপন্ন। যেন দেশটি আহত, রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সংক্ষেপে, পুরো দেশটি কারাগারে, ফাঁসির ক্ষেত্র, মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে! সর্বত্র ধ্বংস, নারী-পুরুষের বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া আর্তনাদ এবং হৃদয়বিদারক বিলাপ। নদী ও ফসলের প্রিয়, উর্বর ভূমি জনশত্রু - খুনি, ফ্যাসিস্ট, সুদখোর, অর্থপাচারকারী, আত্মসাৎকারী, লুটেরা, দুর্নীতিবাজ ক্ষমতালোভী ইউনুসের সর্বগ্রাসী পৈশাচিক কার্যকলাপে বিবর্ণ হয়ে গেছে। গণতন্ত্র এখন নির্বাসিত, মানবাধিকার পদদলিত, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিলুপ্ত, এবং নারীর বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা, হামলা এবং ধর্ষণ চলছে। মানুষের জীবন ও সম্পত্তি অনিরাপদ; ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা এখনও নিপীড়নের মুখোমুখি হচ্ছে; আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। কেন্দ্র থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত - লাগামহীন জনতা সন্ত্রাস, লুটপাট, ডাকাতি, চাঁদাবাজি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বিশৃঙ্খলা চরমে।' দেশবাসীর উদ্দেশে লেখা হয়, '৭১-এর রক্তে লেখা সংবিধান, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং রক্ষা করতে হবে।'
