আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রের একটি হোটেল কক্ষে এক বেসরকারি সংস্থার ৩০ বছর বয়সী অফিসারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মৃত ব্যক্তির নাম দিব্যাংশু (বা হিমাংশু), যিনি উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের বাসিন্দা ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, হোটেলে প্রেমিকার সঙ্গে সময় কাটানোর আগে দিব্যাংশু যৌন উত্তেজক বড়ি ও অ্যালকোহল গ্রহণ করেছিলেন। এরপরই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাক্রম
দিব্যাংশু একটি বেসরকারি সংস্থায় অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন এবং সোমবার (৪ আগস্ট) গোয়ালিয়রের থাটিপুর এলাকার ম্যাক্সন হোটেলে ব্যবসায়িক সফরে এসে ওঠেন। মঙ্গলবার রাতে (৫ আগস্ট) দিল্লি থেকে তাঁর প্রেমিকা হোটেলে এসে পৌঁছান। সূত্রের খবর, প্রেমিকার আগমনের কিছুক্ষণ আগে দিব্যাংশু মদ্যপান করেন এবং যৌন উত্তেজক ওষুধ গ্রহণ করেন। ওই ওষুধের মধ্যে ছিল ড্যাপোক্সেটিন এবং সিলডেনাফিল—যা যথাক্রমে স্নায়ুবিক ভারসাম্য রক্ষা ও রক্তপ্রবাহ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধ দুটি Selective Serotonin Reuptake Inhibitor (SSRI) এবং Phosphodiesterase Type 5 (PDE5) ইনহিবিটর শ্রেণির। রাত আনুমানিক ১১টার সময় তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে হোটেল কর্মীরা পুলিশকে খবর দেন এবং দিব্যাংশুকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসা শুরুর আগেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
হোটেলে কী মিলেছে?
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হোটেল কক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি নীল রঙের যৌন উত্তেজক বড়ির খালি প্যাকেট এবং মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রেমিকাকে নজরবন্দি করে জিজ্ঞাসাবাদ
ঘটনার সময় কক্ষে উপস্থিত থাকা দিল্লি-নিবাসী প্রেমিকাকে পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে। প্রেমিকা জানিয়েছেন, দিব্যাংশু অত্যধিক মদ্যপান করেছিলেন এবং ওষুধ সেবনের কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বমি করতে শুরু করেন ও দুর্বল হয়ে পড়েন।
চিকিৎসকদের প্রাথমিক ধারণা
চিকিৎসকদের মতে, যৌন উত্তেজক বড়ি এবং অ্যালকোহলের সংমিশ্রণেই হৃদযন্ত্রে চাপ পড়ে থাকতে পারে। এর ফলেই হৃদরোগ বা হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে। একইসঙ্গে একটি অজ্ঞাত হৃদ্রোগ সংক্রান্ত সমস্যা (Undiagnosed Cardiac Condition) ছিল বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে, যা এই সংকটের অন্যতম কারণ হতে পারে।
ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ পাঠানো হয়েছে
দিব্যাংশুর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। বুধবার সকালে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পরিবার কোনও সন্দেহ প্রকাশ করেনি
মৃত দিব্যাংশুর পরিবার লখনউ থেকে গ্বালিয়রে এসে পৌঁছেছে। তাঁরা কোনওরকম ষড়যন্ত্র বা অস্বাভাবিকতার অভিযোগ করেননি।
তদন্ত চলছে
ঘটনাটি নিয়ে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। গোয়ালিয়র পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা সমস্ত দিক থেকে তদন্ত করছি। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ, ফোন রেকর্ড, ওষুধের উৎস ইত্যাদি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এই ঘটনা আবারও যৌন উত্তেজক ওষুধের অসচেতন ব্যবহারের বিপদের দিকটি সামনে আনলো। চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের ওষুধ গ্রহণ কতটা প্রাণঘাতী হতে পারে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে দিব্যাংশুর মৃত্যুতে।
