আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের বৃহত্তম বিমান সংস্থা ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় সরকার। সাম্প্রতিক দিনে ২,০০০-এর বেশি ফ্লাইট বাতিল হওয়াকে ঘিরে তৈরি হওয়া ব্যাপক সংকটের প্রেক্ষিতে ইন্ডিগোর মোট অপারেশন ১০ শতাংশ কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত এসেছে এমন সময়ে, যখন ইন্ডিগো দাবি করেছিল যে তাদের পরিষেবা এখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে।


বর্তমানে ইন্ডিগো প্রতিদিন প্রায় ২,২০০টি ফ্লাইট চালায়। ফলে ১০ শতাংশ অপারেশন কমানো মানে প্রতিদিন ২০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল হবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই যাত্রীদের ভোগান্তি আরও কিছুটা বাড়তে পারে, যদিও সরকারের দাবি—এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করবে।


এক্স-এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইন্ডিগো জানিয়েছে, “মন্ত্রণালয় মনে করেছে, ইন্ডিগোর সামগ্রিক রুট সংখ্যা কমানো হলে সংস্থার অপারেশন স্থিতিশীল হবে এবং ফ্লাইট বাতিলের ঘটনা কমবে। সেই কারণেই ১০ শতাংশ অপারেশন কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশ মান্য করলেও ইন্ডিগো আগের মতোই সব গন্তব্যে পরিষেবা চালিয়ে যাবে।”


একই সঙ্গে সংস্থাটিকে সরকারের সব নির্দেশ কঠোরভাবে মানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভাড়া সীমাবদ্ধ রাখা, যাত্রী সুবিধা নিশ্চিত করা এবং অভিযোগ নিষ্পত্তিতে কোনও রকম ছাড় না দেওয়া। ইন্ডিগো জানিয়েছে, এসব নির্দেশ তারা কোনও ব্যতিক্রম ছাড়াই পালন করবে।


এই সিদ্ধান্তের আগে বুধবার ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্সকে তলব করেছিল অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক। সেখানে তিনি সংস্থার বর্তমান পরিস্থিতি ও পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আপডেট দেন। সেই বৈঠকের পরই সরকার অপারেশন কমানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী কে. রাম মোহন নাইডুও এক্স-এ এই বৈঠক ও সিদ্ধান্তের বিষয়ে পোস্ট করেন।


উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, প্রথমে ডিজিসিএ (DGCA) ইন্ডিগোর পরিষেবা ৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে মন্ত্রক সেই হার বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করে। সংশোধিত নোটিস ইতিমধ্যেই ইন্ডিগোর কাছে পাঠানো হয়েছে।


ইন্ডিগো আরও জানিয়েছে, ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল, সেগুলির জন্য ১০০ শতাংশ রিফান্ড ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে বাকি রিফান্ড এবং লাগেজ হস্তান্তরের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


এর আগে এক্স-এ পোস্ট করে পিটার এলবার্স দাবি করেছিলেন, ইন্ডিগো “আবার নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে” এবং যাত্রীদের ধৈর্য ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান। যদিও সরকারের অবস্থান তাতে বদলায়নি।


এদিকে, সরকার আগেই ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছিল। সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী কে. রাম মোহন নাইডু জানান, ডিজিসিএ ইতিমধ্যেই ইন্ডিগোর শীর্ষ কর্তাদের ‘শোকজ’ নোটিস পাঠিয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে বিমান বিধি ও আইনের আওতায় প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”


সব মিলিয়ে, দেশের বৃহত্তম বিমান সংস্থার উপর সরকারের এই কড়া নজরদারি স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে যাত্রী স্বার্থ ও পরিষেবার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে আর কোনও আপোষ করতে চাইছে না প্রশাসন।