আজকাল ওয়েবডেস্ক: যখন আপনি আধারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কোনও নথির ক্ষেত্রে 'প্রথম' হওয়ার কথা শুনবেন, তখন আপনি ভাবতে পারেন যে এর ফলে সুবিধা, স্বীকৃতি এবং সুযোগও মিলবে। কিন্তু রঞ্জনা সোনাওয়ান, প্রথম ভারতীয় যিনি আধার কার্ড পেয়েছেন। তাঁর জীবন প্রত্যাশা অনুযায়ী দিক পরিবর্তন করেনি। ডিজিটাল পরিচয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত একটি নতুন ভারতের প্রতীকী মুখ হওয়া সত্ত্বেও রঞ্জনা আর্থিকভাবে সংগ্রাম করে চলেছেন। এখনও সরকারি প্রকল্প থেকে কোনও সুবিধা পাননি।

মহারাষ্ট্রের নন্দুরবার জেলার টেম্বলি গ্রামের রঞ্জনা। বয়স ৫৪ বছর। ২৯সেপ্টেম্বর ২০১০ সালে দেশের প্রথম আধার কার্ডধারী তিনি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং এবং সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তাঁর ছবি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত। তিনি আশা করেছিলেন যে এই পরিচয় উন্নয়নমূলক প্রকল্প, কল্যাণমূলক সুবিধা এবং সামাজিক সহায়তার দরজা খুলে দেবে। দুর্ভাগ্যবশত, এর কিছুই ঘটেনি।

যে প্রধান প্রকল্পগুলির সুবিধা তাঁর পাওয়া উচিৎ তার মধ্যে অন্যতম হল লাড়কি বহিন যোজনা। যেখানে ২১ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মহিলাদের মাসিক ১,৫০০ টাকা সহায়তা প্রদান করে থাকে রাজ্য সরকার। তবে, রঞ্জনা এখনও একটি কিস্তির টাকাও পাননি।

কেন? কারণ তাঁর আধার অন্য কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করা আছে বলে জানা গিয়েছে। তার আধার নম্বরের এই ভুল লিঙ্কের অর্থ হল ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (DBT) এর অধীনে স্থানান্তরিত কোনও প্রকল্পের কোনও সুবিধাই তাঁর কাছে পৌঁছবে না।

রঞ্জনার স্বামী বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করেন। রঞ্জনা নিজেও দিনমজুরের কাজ করেন। বার্ষিক আয় মাত্র ৪০ হাজার টাকা। তিন ছেলের মধ্যে একজন কাজ করেন। বাকি দু'জন এখনও পড়াশোনা করছে। 

রঞ্জনা এই বছরই অন্তত সাতবার তালুক অফিসে গিয়ে আধার সঠিকভাবে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। ব্যাঙ্কের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁর আধার নম্বরটি একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সংযুক্ত। সম্ভবত কোনও জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের সঙ্গে। এর ফলে ডিবিটি-তে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষ এবং ব্যাঙ্কের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা সত্ত্বেও, তাঁকে সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাঙ্কের মুম্বই শাখায় যেতে বলা হয়েছে। যার খরচ তাঁর পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।

দৃশ্যত ক্লান্ত এবং আশাহত রঞ্জনা বলেন, “আমরা বৃদ্ধ হচ্ছি। আমরা আর কতদিন সরকারি অফিসে ঘুরে বেড়াতে পারব?” প্রশাসনে উপর তাঁর খুব একটা আশা নেই। তবে পরিবারের দেখাশোনা করার জন্য ছেলেদের উপর তাঁর আস্থা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমি আর সরকারের উপর নির্ভর করি না।” 

জেলা আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সমস্যাটি সম্ভবত একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অথবা আধার সংযোগের সময় ব্যাঙ্ক লিঙ্কে ত্রুটির কারণে তৈরি হয়েছে। তাঁরা রঞ্জনাকে অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু একাধিক প্রচেষ্টার পরেও কোনও সমাধান হয়নি।