আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারত সফলভাবে পরীক্ষা করল পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম অগ্নি প্রাইম ক্ষেপণাস্ত্রের এক অভিনব সংস্করণ। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বৃহস্পতিবার ভোরে এক্স-এ ভিডিও শেয়ার করে জানান, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি রেল ইঞ্জিন টানা এক বিশেষ প্ল্যাটফর্ম থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত যোগ দিল সেই বিরল তালিকায়, যেখানে এতদিন ছিল রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। এরা রেল-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে সক্ষম রাষ্ট্র।
কেন এই উৎক্ষেপণ বিশেষ?
অগ্নি প্রাইম একটি ক্যানিস্টারাইজড, দুই ধাপের, কঠিন জ্বালানি-নির্ভর মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, যার পরিসর প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার। এতদিন এই ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র মূলত সাইলো বা সড়কভিত্তিক লঞ্চারের মাধ্যমে উৎক্ষেপিত হয়েছে। এবার প্রথমবার ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা এটি রেলভিত্তিক মোবাইল লঞ্চার থেকে নিক্ষেপ করল।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “রেলভিত্তিক এই লঞ্চার দেশের যে কোনও প্রান্তে ট্র্যাকের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, এতে প্রতিক্রিয়ার সময় কমে আসবে এবং যুদ্ধকালে চলাচলের ক্ষমতাও বাড়বে।”
India has carried out the successful launch of Intermediate Range Agni-Prime Missile from a Rail based Mobile launcher system. This next generation missile is designed to cover a range up to 2000 km and is equipped with various advanced features.
— Rajnath Singh (@rajnathsingh)
The first-of-its-kind launch… pic.twitter.com/00GpGSNOeETweet by @rajnathsingh
কৌশলগত সুবিধা
রেলভিত্তিক উৎক্ষেপণের প্রধান সুবিধা হল চলনশীলতা ও অপ্রত্যাশিততা। ভারতের কাছে প্রায় ৭০,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ রয়েছে—বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম নেটওয়ার্ক। ফলে দেশের প্রায় যে কোনও প্রান্ত থেকেই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া সুড়ঙ্গ বা টানেলের ভেতরে ক্ষেপণাস্ত্র লুকিয়ে রাখা যাবে, যা স্যাটেলাইট নজরদারি থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে। শত্রুপক্ষ যখন ভেবে নেবে ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে রয়েছে, তখন রেললাইনের অপ্রত্যাশিত কোনও প্রান্ত থেকে নিক্ষেপ তাদের বিস্মিত করবে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এটি কৌশলগতভাবে বড় সুবিধা এনে দেবে।
তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র কেবলমাত্র রেলপথে থেকেই উৎক্ষেপণ সম্ভব। যেখানে ট্র্যাক নেই, সেখানে এটি ব্যবহার অকার্যকর। তাছাড়া আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র অনেক সময় অত্যন্ত নির্দিষ্ট স্থান থেকে নিক্ষেপের প্রয়োজন হয় যাতে লক্ষ্যবস্তু নিখুঁতভাবে আঘাত করা যায়। রেলভিত্তিক লঞ্চার সবসময় সেই সূক্ষ্ম নির্ভুলতা দিতে নাও পারে। অন্যদিকে রেলপথ শত্রুপক্ষের নাশকতার লক্ষ্য হতে পারে। এত দীর্ঘ নেটওয়ার্কে সর্বত্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন, বিশেষ করে যুদ্ধের সময়।
রেল-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ধারণা একেবারে নতুন নয়। ১৯৮০-র দশকে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথমবার বিশেষ ট্রেন থেকে RT-23 Molodets নামের তিন ধাপের আইসিবিএম নিক্ষেপ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এর পাল্টা হিসেবে Peacekeeper Rail Garrison প্রোগ্রাম চালু করেছিল, যেখানে ৫০টি আইসিবিএম ট্রেনে রাখা হয়েছিল। তবে যুদ্ধ শেষে, ১৯৯১ সালে মার্কিন প্রকল্পটি বাতিল হয়।
ভারতের নতুন ঢাল
আসলে, প্রতিটি দেশই জানে যে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র শত্রুপক্ষের প্রথম আক্রমণের মূল লক্ষ্য। যদি সব ক্ষেপণাস্ত্র সাইলোতে জমা থাকে, তবে সেগুলি সহজেই শত্রুর স্যাটেলাইট নজরে আসবে এবং প্রথম আঘাতেই ধ্বংস হতে পারে। সেই ঝুঁকি কমাতেই রেল-ভিত্তিক মোবাইল লঞ্চার এক অতিরিক্ত সুরক্ষা দিচ্ছে।
অগ্নি প্রাইমের রেল-ভিত্তিক সফল উৎক্ষেপণ ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেল। এটি শুধু প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়, কৌশলগত দিক থেকেও দেশের প্রতিরক্ষাকে আরও শক্তিশালী করল। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করে আকস্মিক পাল্টা আঘাত হানতে এই ব্যবস্থা ভারতের জন্য এক শক্তিশালী ঢাল হয়ে উঠবে।
