আজকাল ওয়েবডেস্ক: এবার বিরোধ ঘরেই! শুধু বিরোধী দলগুলিই নয়, 'বিকশিত ভারত রোজগার এবং আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ)' বিলের বিরুদ্ধে সরব এবার এনডিএ সরকারের অন্যতম শরিক তেলেগু দেশম পার্টিও। কেন্দ্রীয়ভাবে অর্থসংস্থানযোগ্য প্রকল্পের ব্যয় রাজ্যগুলির উপর চাপানোর পরিকল্পনা নিয়ে অসন্তুষ্ট অন্ধ্র্রপ্রদেশের শাসক দল।

কেন্দ্রের বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার এমজিএনআরইজিএ-র (মনরেগা) অধীনে থাকা গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্প বাতিল করে ‘বিকশিত ভারত গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ) (ভিবি-জি রাম জি) বিল, ২০২৫’ প্রবর্তনের পরিকল্পনা করছে। গত দুই দশক ধরে গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে ইউপিএ সরকারের আমলে এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল।

কংগ্রেসের অভিযোগ, এমজিএনআরইজিএ থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম বাদ দেওয়ার জন্যই ওই প্রকল্পের নাম বদলে দিচে মরিয়া মোদি সরকার।  সাংসদ মনীশ তিওয়ারি বলেছেন, "মহাত্মা গান্ধীর শেষ কথা ছিল 'হে রাম' - তাহলে এমএনআরইজিএ আইন থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে? ভগবান রামের প্রতি মহাত্মা গান্ধীর বিশ্বাস নিয়ে কি কখনও কোনও সন্দেহ ছিল? তাঁর ভজনগুলোই তাঁর বিশ্বাসের প্রমাণ।"

মঙ্গলবার লোকসভায় এই ইস্যুতে বক্তব্য রাখেন কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও। তাঁর অভিযোগ, মনরেগা প্রকল্পে চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা হত। চাহিদার উপর ভিত্তি করেই কেন্দ্রের ফান্ডিং আসতো। কিন্তু নতুন বিলে সেই সংস্থান নেই। এক্ষেত্রে কেন্দ্র আগে থেকে ফান্ড বরাদ্দ করে দেবে। প্রিয়াঙ্কার দাবি, পঞ্চায়েত স্তরে উন্নয়নের ক্ষমতা পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ করেছিল মনরেগা। কারণ গ্রাম সভা স্থির করত, তাদের গ্রামে কোন কাজ হবে। তার উপর ভিত্তি করে উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হত। প্রিয়াঙ্কার অভিযোগ, নতুন বিল কার্যকর হলে গ্রাম সভার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা খর্ব হবে। 

মুখর তৃণমূল কংগ্রেসও। বাংলার শাসক দলের তরফে রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন 'ভিবি-জি রাম জি' প্রকল্প থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম বাদ দেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করেছেন।

নতুন 'ভিবি-জি রাম জি' বিলটি, এমজিএনআরইজিএ আইন থেকে কতটা আলাদা?

যদিও এমজিএনআরইজিএস-এ মহাত্মা গান্ধীর পরিবর্তে জি রাম জি নামকরণটি অনেক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, তবে এই প্রকল্পের মধ্যেই যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলো আনা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেই বেশ কয়েকটি দল সরব হয়েছে। নতুন বিলটিতে, কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির মধ্যে যথাক্রমে ৬০:৪০ অনুপাতে তহবিল ভাগাভাগির একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে।

বর্তমান এমজিএনআরইজিএ-এর অধীনে, মজুরি এবং উপকরণের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের আনুপাতিক অবদান ৯০:১০ শতাংশ। অবশ্য সংশোধিত বিলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এবং উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশের মতো পাহাড়ি রাজ্য এবং জম্মু ও কাশ্মীরের মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির ক্ষেত্রে তহবিল ভাগাভাগির অনুপাত ৯০:১০-ই রাখা হচ্ছে।

যদিও প্রস্তাবিত বিলটি নিশ্চিত কাজের দিনের সংখ্যা ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ দিন করেছে, এটি রাজ্যগুলির জন্য নির্দিষ্ট বাজেটও প্রস্তাব করেছে। এমজিএনআরইজিএস একটি চাহিদা-ভিত্তিক প্রকল্প, যার কোনও নির্দিষ্ট বাজেট নেই। এমজিএনআরইজিএস-এ চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা হত। চাহিদার উপর ভিত্তি করেই কেন্দ্রের ফান্ডিং আসতো। কিন্তু নতুন বিলে সেই সংস্থান নেই বলে অভিযোগ। এক্ষেত্রে কেন্দ্র আগে থেকে ফান্ড বরাদ্দ করে দেবে। এর অর্থ হল, এখন গ্রামীণ পরিবারগুলো কাজের চাহিদা মেনে নয়, শুধুমাত্র কেন্দ্রের তরফে বিজ্ঞাপিত এলাকাতেই কর্মসংস্থান পাবে। ফলে রাজ্য সরকারগুলির স্থানীয় কর্মসংস্থানের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে নমনীয়তা সীমিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নতুন বিলটি কৃষিকাজের ভরা মরশুমে দু'মাসের জন্য প্রকল্পটি স্থগিত করার প্রস্তাব করেছে, যার লক্ষ্য হল কৃষি কাজের জন্য পর্যাপ্ত শ্রম নিশ্চিত করা এবং খরচের কৃত্রিম বৃদ্ধি রোধ করা। তবে, আর্থিক বোঝা রাজ্যগুলির উপর বাড়ছে। যা অনেক রাজ্যের জন্য চাপ বাড়াতে পারে।

নতুন 'ভিবি-জি রাম জি' বিল নিয়ে টিডিপি উদ্বিগ্ন
দ্য ইকোনমিক টাইমস-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এনডিএ জোটের অংশীদার তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) 'বিকশিত ভারত জি রাম জি' প্রকল্পে প্রস্তাবিত তহবিল ভাগাভাগির ধরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

টিডিপি অন্ধ্রপ্রদেশের সবচেয়ে বড় এনডিএ অংশীদার এবং দলের নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী। ১৬ জন লোকসভা সাংসদ নিয়ে টিডিপি বিজেপির পর কেন্দ্রে এনডিএ-র দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দল। টিডিপি-র একজন সিনিয়র রাজ্য মন্ত্রী দ্য ইকোনমিক টাইমসকে বলেছেন, "এই নতুন অর্থায়ন পদ্ধতি রাজ্য সরকারের উপর একটি সুস্পষ্ট বোঝা চাপিয়ে দেবে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশের মতো অর্থিকভাবে সংকটে থাকা একটি রাজ্যের জন্য। এই অর্থায়ন পদ্ধতি গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পটিকে অন্য যেকোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মতোই করে তুলেছে।" 

টিডিপি-র সূত্রে খবর, এনডিএ-র এই প্রধান 'বন্ধু' দলটি 'বিকশিত ভারত জি রাম জি' বিলটিকে আরও খতিয়ে দেখার জন্য একটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠাতে চাইবে।

বিজেপি 'ভিবি-জি রাম জি' বিলের পক্ষে সাফাই দিয়ে বলেছে যে, চাকরির নিশ্চয়তা "দুর্বল করা হয়নি, বরং পোক্ত করা হয়েছে", এবং এমজিএনআরইজিএ-র অধীনে মজুরিভিত্তিক কর্মসংস্থানের দিন ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ দিন করার বিষয়টি তুলে ধরেছে। বিজেপি তাদের এক্স-এর অফিসিয়াল হ্যান্ডেল থেকে পোস্ট করেছে যে, "এমএনআরইজিএ-তে কাঠামোগতস্তরে ত্রুটি ছিল... এটি কেবল নতুন নামকরণ নয়, বরং একটি পরিচ্ছন্ন ও শক্তিশালী কাঠামো তৈরির জন্য একটি প্রয়োজনীয় আইনি পুনর্গঠন।"

দ্য হিন্দু-কে সিপিআই(এম)-এর সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি বলেছেন, "দায়িত্ব এখন রাজ্যগুলোর উপর চাপানো হচ্ছে, এবং কেন্দ্র এখন বরাদ্দ কমিয়ে বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলোকে শাস্তি দিতে পারবে।" উল্লেখ্য, সিপিএম-নেতৃত্বাধীন এলডিএফ কেরলে ক্ষমতাসীন দল।

এনডিএ-র প্রধান মিত্র টিডিপি-র নেতারাও এমজিএনআরইজিএ-র পরিবর্তে প্রস্তাবিত 'জি রাম জি' প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায়, সরকারকে খসড়া বিলটি বিতর্ক ও আলোচনার জন্য একটি কমিটিতে পাঠানোর কথা বিবেচনা করতে হতে পারে।