আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাতে খাওয়াদাওয়ার পর গল্প সেরে ঘুমিয়ে পড়েছিল গোটা পরিবার। ঘুমন্ত অবস্থাতেই ঘটল বিপত্তি। মাথার উপর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল বাড়ির ছাদ, দেওয়াল। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মর্মান্তিক পরিণতি হল গোটা পরিবারের। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের পাটনায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দানাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের দিয়ারা এলাকায় একটি পুরনো বাড়ির একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে ওই পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে ঘটনাস্থলে। 

পুলিশ আরও জানিয়েছে, বাড়িটি ইন্দিরা আবাস যোজনায় তৈরি হয়েছিল। বহু পুরনো ওই বাড়িটি ভগ্নদশাতেই ছিল। রবিবার রাতে মানস নয়া পানাপুর ৪২ পট্টি গ্রামে দুর্ঘটনাটি ঘটে। মৃতেরা হলেন, বাবলু খান (৩২), তাঁর স্ত্রী রোশন খাতুন (৩০), ছেলে মহম্মদ চাঁদ (১০), মেয়ে রুখসার (১২) এবং দু'বছরের কনিষ্ঠতম কন্যাসন্তান। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গতকাল রাতে খাওয়াদাওয়ার পর সকলেই একসঙ্গে ঘুমাতে যান। ঘুমন্ত অবস্থাতেই তাঁদের উপর ভেঙে পড়ে পু্রনো বাড়িটি। বিকট শব্দ শুনেই স্থানীয়রা সেখানে ছুটে যান। বাড়িটি পুরোপুরি ধসে পড়তেই দেখেন তাঁরা। পঞ্চায়েত প্রধান বকিল রাই জানিয়েছেন, দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টার প্রচেষ্টার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে পাঁচজনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। 

গ্রামবাসীরা আরও জানিয়েছেন, বাড়িটি ইন্দিরা আবাস যোজনায় তৈরি হয়েছিল। সেটির দেওয়াল ও ছাদে কয়েক বছর আগেই ফাটল দেখা যায়। পরিবারটি আর্থিকভাবে দুর্বল ছিল। তাই বাড়িটি মেরামত করার সামর্থ্য ছিল না তাঁদের। কয়েক মাস আগেই বন্যার কবলে পড়েছিল এলাকাটি‌। প্রচুর ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই সময়। সম্ভবত বন্যার কারণে পুরনো বাড়িটি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। 

স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের তরফে এই পুরনো বাড়িগুলি মেরামতের দ্রুত পদক্ষেপ করা হোক। পাশাপাশি যে বাড়িগুলি ভগ্নদশায় রয়েছে, সেখান থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক। 

প্রসঙ্গত, গণেশ চতুর্থীতেই মহারাষ্ট্রে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। মহারাষ্ট্রের পালগড় জেলায় ১৩ বছরের পুরনো একটি বেআইনিভাবে নির্মীত পাঁচতলা আবাসন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। দুর্ঘটনায় মোট ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের তালিকায় এক বছরের এক শিশুকন্যা ও তার মা-ও রয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার গভীর রাতে। 

পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, ওই রাতেই একটি পরিবারে জন্মদিনের পার্টি চলছিল। জোয়াল পরিবারের সদস্যরা কেক কেটে উদযাপন করছিলেন। বাবা ও মায়ের কোলে উঠে কেক কাটছিল এক বছরের ওই শিশুকন্যা। কেক কাটার পরেই আত্মীয়দের সঙ্গে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেন বাকিরা। ঠিক তখনই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ওই আবাসন। যা ১৩ বছর আগে বেআইনিভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২৭ আগস্ট রাত ১২টা বেজে ৫ মিনিটে পাঁচতলা ভবনটি ভেঙে পড়ে। যেখানে ৫০টি ফ্ল্যাট ছিল। ১২টি ফ্ল্যাট ধসে পড়েছে গতকাল রাতে। একাধিক ছবিতে দেখা গেছে, ফ্ল্যাটেথ মধ্যে বেলুন, আলো দিয়ে সাজানো হয়েছিল। লোভনীয়, সুস্বাদু খাবারে সাজানো ছিল টেবিল। পছন্দের পোশাকে সেজে উঠেছিলেন সকলে। কেক কাটার পর একে অপরকে খাইয়েও দেন। ঠিক এর পাঁচ মিনিট পরেই ধসে পড়ে আবাসনের একাংশ। 

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে এক বছরের শিশুকন্যা ও তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যেই দেহ দুটি উদ্ধার করা হয়েছে।‌ দুর্ঘটনা পর তার বাবার খোঁজ পাওয়া যায়নি। সম্ভবত এখনও ধ্বংসস্তূপের তলায় আটকে রয়েছে। গভীর রাত থেকেই চলছে উদ্ধারকাজ। এখনও পর্যন্ত অনেকেই আটকে আছেন বলে আশঙ্কা উদ্ধারকারীদের। 

একযোগে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। একটানা ৩০ ঘণ্টা ধরে চলছে উদ্ধারকাজ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত মোট ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন। এখনও ছয়জন হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের সকলের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

ঘটনাটির পরেই মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ওই বিল্ডিংয়ের মালিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চারতলা রমাবাই অ্যাপার্টমেন্টটি ধসে পড়ে বলে আধিকারিকরা জানিয়েছেন। ভাসাই-ভিরার পুর কর্পোরেশনের (ভিভিএমসি) একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, আহত এবং উদ্ধার হওয়া আরও ছয়জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ), স্থানীয় পুলিশ এবং দমকল বিভাগ-সহ জরুরি দলগুলি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তল্লাশি চালিয়ে আরও কেউ সেখানে আটকে পড়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে। ধসের ফলে বেশ কয়েকটি পরিবার ঘরছাড়া হয়ে পড়েছে। সকল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে চন্দনসার সমাজমন্দিরে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের খাবার, জল, চিকিৎসা সহায়তা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়া হয়েছে।