আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহারাষ্ট্রে আসন্ন স্থানীয় সংস্থা নির্বাচনের আগে রাজ্যের নির্বাচনী তালিকায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোট মহা বিকাশ আঘাড়ি (এমভিএ), মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দল একযোগে নির্বাচনী তালিকা পুনর্বিবেচনা ও সংশোধনের দাবি তুলেছে।

বিরোধীদের দাবি, নির্বাচনী তালিকা ও ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করার  প্রক্রিয়ায় গভীর ত্রুটি ও কারচুপি রয়েছে, যা বিজেপির পক্ষে সুবিধাজনকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ইস্যু ঘিরেই বিরোধী শিবিরের ‘ভোট চুরি’ প্রচার অভিযান নতুন গতি পেয়েছে, বিশেষত ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর ভোটের ধরণ ও ভোটার তালিকার তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে এই অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) কংগ্রেস নেতা বালাসাহেব থোরাত নির্বাচনী ত্রুটিগুলি নিয়ে ফের প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “রাজ্যের ভোটার তালিকায় শত শত, হাজার হাজার ভুল থেকে যাচ্ছে, যা বহুবার অনুরোধ করেও সংশোধন করা হয়নি। মনে হচ্ছে বিজেপি এবং শাসকগোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবেই স্বচ্ছ ও ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা চায় না, কারণ তা তাদের স্বার্থের পরিপন্থী।” থোরাত আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্র সরকার এই ত্রুটিগুলি উপেক্ষা করছে এবং এটি “ইচ্ছাকৃত অবহেলা”র অংশ।

এদিকে এমএনএস নেতা বালা নানদগাঁওকর জানান, মঙ্গলবারের বৈঠকে নির্বাচন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা “অসন্তোষজনক” হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা চাইছি আরেকটি বৈঠক, যেখানে এই অনিয়ম নিয়ে স্পষ্ট পদক্ষেপের ঘোষণা হবে।” এই পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার দিনেশ ওয়াঘমারে ও মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক এস. চোকালিংমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাৎক্ষণিক সংশোধন ও ভোটার তালিকার স্বচ্ছ প্রকাশের দাবি জানাবে।

আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির দিকে জুতো ছোড়া: সামাজিক মাধ্যমে ‘অসংযত প্রতিক্রিয়া’ নিয়ে সতর্ক করল আদালত

বিরোধী প্রতিনিধিদলে রয়েছেন কংগ্রেস, এনসিপি (শরদ পাওয়ার গোষ্ঠী), শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী), এমএনএস এবং বাম ও অন্যান্য আঞ্চলিক দলের নেতা—যাদের মধ্যে শরদ পাওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে, রাজ ঠাকরে, বালাসাহেব থোরাত ও বর্ষা গাইকওয়াদের মতো শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বিরোধীদের জমা করা  স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়েছে, নির্বাচনী তালিকায় বিপুল পরিমাণ ভুল রয়েছে—দ্বৈত নাম, অস্তিত্ববিহীন ভোটার, অনুপস্থিত পরিবার, এমনকি এমন ঘটনাও আছে যেখানে “ছেলের বয়স বাবার চেয়ে বড় করে দেখানো হয়েছে”।

বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে কেন মহারাষ্ট্রে বিহারের মতো ‘স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (SIR)’ বা বিশেষ তালিকা পুনর্বিবেচনা অভিযান চালানো হচ্ছে না। স্মারকলিপিতে সরাসরি বলা হয়েছে, “নির্বাচন কমিশন কি বিহারের মতো মহারাষ্ট্রেও SIR চালাবে?” একইসঙ্গে, তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে রাজ্যের শহরাঞ্চলে—বিশেষ করে মুম্বই, থানে, পুনে, নাসিক ও কল্যাণ-ডোম্বিভলিতে—অসংখ্য অভিবাসী শ্রমিক একইসঙ্গে দুই রাজ্যে ভোটার হিসেবে নথিভুক্ত রয়েছেন।

আরও একটি বড় দাবি হলো, আসন্ন স্থানীয় নির্বাচনে VVPAT (ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেইল) ব্যবস্থার পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা বা বিকল্প হিসেবে হাতে লেখা ব্যালট পেপারে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা। এক সিনিয়র বিরোধী নেতা বলেন, “আমরা এমন একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া চাই, যেখানে ভোট ইলেকট্রনিকভাবে কারচুপি করা না যায়।” বিরোধী শিবিরের মতে, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে যেভাবে কারচুপি হয়েছে বলে তারা দাবি করছে—তেমনই কৌশল আসন্ন পৌরসভা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যবহার হতে পারে, যদি ভোটার তথ্য নিরপেক্ষভাবে যাচাই না করা হয়।

স্বাধীন সংস্থা কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ (CHRI)-এর তদন্তেও মহারাষ্ট্রে নির্বাচনী অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। নালাসোপারা কেন্দ্রে এক ভোটারের নাম ছয়বার তালিকাভুক্ত হয়েছে, এবং প্রতিবারই আলাদা EPIC নম্বরসহ—যা নির্বাচন বিধির গুরুতর লঙ্ঘন ও সম্ভাব্য দু'বার করে  ভোটদানের সুযোগ সৃষ্টি করে। এইসব অভিযোগের মাঝে রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন তাদের দায়িত্ব হলেও ভোটার তালিকার সংশোধন, সংযোজন বা বিয়োজন সম্পূর্ণভাবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন।

বিরোধীরা বলছে, প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না এলে মহারাষ্ট্রে “ভোট চুরি ২.০”-এর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই তারা তাৎক্ষণিক নিরীক্ষা, যাচাই করা  তালিকার প্রকাশ ও ভোটার তথ্যের খোলামেলা প্রবেশাধিকারের দাবি জানাচ্ছে। তাদের বক্তব্য, স্থানীয় সংস্থা নির্বাচনই ২০২৯ সালের মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের রাজনৈতিক সুর নির্ধারণ করবে — আর তাই “ভোট চুরি রুখে গণতন্ত্র বাঁচাও” এখন বিরোধীদের প্রধান স্লোগান।